হযরত খান জাহান আলী (রঃ) এর প্রিয় দুই কুমির কালা পাহাড় ও ধলা পাহাড় সম্পর্কে জানার আগ্রহ কার না নেই? সত্যিই কালাপাহাড় বা ধলাপাহাড় বলে কিছু ছিল, নাকি আজও আছে তা আমাদের সবার কাছে একটা রহস্যই রয়ে গেছে। দর্শক সেই রহস্যকে ভেদ করতে ও বাগেরহাট জাদুঘর - কে ঘুরে দেখতে আমাদের আজকের এই ভিডিওটি। আশা করি ভিডিওটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখবেন।
⏲ Chapters:
00:00 - Introduction
00:30 - History of Crocodiles of Khan Jahan Ali Majar
02:34 - Bagerhat Museum
04:53 - Conclusion
দর্শক, কালাপাহাড় ও ধলাপাহাডের ইতিহাস জানতে আপনাকে ফিরে যেতে হবে এখান থেকে ৬০০ বছর আগে। ১৪০০ শতকের প্রথম দিকে বাংলার শাসক সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহ এর প্রতিনিধি হিসেবে হযরত খান জাহান আলী (রঃ) এ বাগেরহাট ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় 'খলিফাতাবাদ' নগর প্রতিষ্ঠা করেন। তার আজকের মাজার শরীফের সামনে যে ঠাকুর দিঘী রয়েছে সেটা তখন এত বড় ছিল না। সেই সময়ে তিনি এই ঠাকুর দিঘীটিকে খনন করে এটাকে বিশালাকৃতির এক দীঘীতে রূপান্তরিত করেন। এই দীঘীতেই ছেড়ে দেন মিঠা পানির দুটি কুমির। তাদের একটির নাম রাখেন কালাপাহাড় যেটা ছিল পুরুষ আর স্ত্রী কুমিরটির নাম রাখেন ধলাপাহাড়। খান জাহান আলী রঃ নিজের সন্তানের মত করে কুমির দুটিকে লালন পালান করতে থাকেন। তার মৃত্যুর পর কুমির দুটিকে মাজারের খাদেম ও তার অনুসারীরা দেখাশুনা করত। ক্রমে ক্রমে এ কুমির যুগল বংশ বিস্তার করে এবং গত ছয়শ’ বছর ধরে বংশানুক্রমে তারা এ দিঘিতে উন্মুক্ত পরিবেশে বসবাস করে আসছিলো।
আস্তে আস্তে এক সময়ে এ কুমির হযরত খান জাহান আলী (র.) এর ভক্ত অনুরাগীদের বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতীকে পরিণত হয়। এরা হয়ে ওঠে এ মাজার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। অসংখ্য ভক্ত অনুসারীরা প্রতিদিন এই কালাপাহাড় ও ধলাপাহাড়ের নামে তাদের মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য হাঁস-মুরগী, ছাগল মানত দিয়ে থাকেন।
দর্শক, অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য হযরত খান জাহান আলী (রঃ) এর মাজার সংলগ্ন ঠাকুর দিঘীতে এখন আর কালা পাহাড় ও ধলাপাহাড়ের কোন বংশধর বেচে নেই। ধলাপাহাড় নামে যে শেষ বংশধরটি ছিল ২০১৫ সালে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত ও রহস্যঘেরা কালাপাহাড় ধলাপাহাড়ের ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটে। এর আগেই কালাপাহাড় নামের শেষ বংশধর পুরুষ কুমিরটি মারা যায়। বাগেরহাট জাদুঘরে এই সর্বশেষ কালাপাহাডের দেহাবাশেষ আজও মমি আকারে সংরক্ষিত আছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে কালাপাহাড়ের মৃত শরীরকে মমি করে অথবা শুধু চামড়া দিয়ে এই ডামি বানানো হয়েছে। যদিও মাথাটি সম্পূর্ণই কৃত্রিম।
বাগেরহাট শহরের সুন্দরঘোনায় ষাট গমবুজ মসজিদের দক্ষিণ পূর্ব কোণে বাগেরহাট জাদুঘরটির অবস্থান। মুসলিম সংস্কৃতি ও খানজাহান আলীর স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ইউনেস্কো ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৪ সালে ৫২০ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে ষাট গম্বুজ কমপ্লেক্স এর আওতায় এটি নির্মাণ করা হয়। বাগেরহাট অঞ্চল থেকে সংগৃহীত প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই এই অসাধারণ জাদুঘরটি নির্মান করা হয়।
একতলা ভবনের তিনটি গ্যালারি বিশিষ্ট দক্ষিণমুখী জাদুঘর ভবনে সহাপত্যিক বৈশিষ্ট্য ইসলামী সহাপত্যকলাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই জেলা সম্পর্কিত অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক পাওয়া যাবে এখানে। রয়েছে বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে পাওয়া স্মৃতিচিহ্ন, মুদ্রা, বাসন, তৈজসপত্র, মানচিত্র, আরো আছে লিপিবদ্ধ সমৃদ্ব ইতিহাস। আকর্ষনীয় হিসেবে রয়েছে সারাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য মসজিদ ও পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার সুন্দর সুন্দর সব ছবি।
জাদুঘরে ঢুকার জন্য গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম পনের টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। আর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশ মুল্যে নির্ধারন করা হয়েছে ৫ টাকা। সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য পঞ্চাশ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য একশত টাকা করে।
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা ও শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত যাদুঘরটি খোলা থাকে। তবে দুপুরে নামাযের জন্য কিছু সময় জাদুঘরটি বন্ধ থাকে । রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২.০০ থেকে খুলে দেওয়া হয়।
Негізгі бет বাগেরহাট জাদুঘর ও কুমির কালাপাহাড়-ধলাপাহাড়ের আসল রহস্য।
Пікірлер: 23