বাহাসের মাধ্যমে প্রমাণ হলো ফরজ নামাযের পর সম্মিলিত মুনাজাত জায়েজ নয় !আমাদের সমাজে যতগুলি বিদ’আত প্রচলিত আছে , তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরয সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত । এই সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল নবী (সাঃ) থেকে পাওয়া যায় না । কোন কোন বিদ’আত বছরে একবার করা হয় , কোন কোনটি হয়ত মাসে একবার , কোন কোনটি হয়তো সপ্তাহে একবার । কিন্তু সম্মিলিত মুনাজাত এমন এক বিদ’আত যা প্রতিদিন পাঁচবাব করা হয় । সুতরাং এর থেকে দুরে থাকতে হবে । অধিকাংশ মসজিদে ফরজ সালাতের সালাম ফিরানোর পর দুই হাত তুলে ইমাম মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা হয়। অথচ এই প্রথার শারঈ কোন ভিত্তি নেই। এই সম্মিলিত মুনাজাতের দলীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে পাওয়া যায় না।
.
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুয়া কবুল হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর দুয়া নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে সম্মিলিতভাবে নিয়মিত দুয়া করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দুয়া করেছিলেন কিনা সেটিই দেখার বিষয়। তাই প্রথমে আমরা এ বিষয়ে আলেমদের মতামত দেখবো। এরপর দলিল সম্পর্কিত পর্যালোচনা করা হবে ইনশা আল্লাহ।
.
আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দুয়া করেন এবং মুক্তাদীগণ আমীন আমীন বলেন, এ প্রথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে ছিল না। [ফাতওয়া আব্দুল হাই কিতাবের ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০০]
.
মুফতি মুহাম্মাদ শফী বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হতে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হতেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সারকথা হল, এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থী। [আহকামে দুআ, পৃষ্ঠা ১৩]
.
মুফতি ফয়যুল্লাহ হাটহাজারী বলেনঃ ফরজ সালাতের পর দুয়ার চারটি নিয়ম আছে। ১) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দুয়া সমূহ পড়া। নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দুয়া করা। এটি কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দুয়া করা। এটি না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। ৪) ফরজ সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই। না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস সমূহ দ্বারা, সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক। আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে। এ দুয়া অবশ্যই বিদ’আত। [আহকামে দুআ, পৃষ্ঠা ২১]
.
মাওলানা মওদুদী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ এতে সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে জামাআতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদী মিলে যে নিয়মে দুয়া করেন, এ নিয়ম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় প্রচলিত ছিল না। এ কারণে বহু সংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছেন। [আহসানুল ফাতাওয়া, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৬৯৮]
.
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহকে ফরজ সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুয়া করা জায়েজ কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দুয়া করা বিদ’আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এরূপ দুয়া ছিল না। বরং তাঁর দুয়া ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দুয়া করা যথাযথ। [মাজমু’আ ফাতাওয়া, ২২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৯]
.
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। [ইবনুল কাইয়্যিম, যাদুল মাআদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৪৯]
.
শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দুয়া করা স্পষ্ট বিদ’আত। কারণ এরূপ দুয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরজ সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দুয়া করে সে যেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধিতা করে। [হাইয়াতু কিবারিল উলামা, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৪৪]
.
সম্মিলিত মুনাজাতের এই প্রথাকে চালু রাখার উদ্দেশ্যে কিছু কিছু আলেম যে সকল বর্ণনা পেশ করে থাকেন, তার মধ্যকার দুটি বর্ণনা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল। মূলত এর স্বপক্ষে কোন সহীহ অথবা জঈফ বর্ণনাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
.
১) আসওয়াদ আল আমেরী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফজরের সালাত আদায় করলাম। তিনি সালাম ফিরিয়ে ঘুরে বসলেন এবং তাঁর দু হাত উঠালেন ও দুয়া করলেন। [ফাতাওয়া নাযীরিয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৬৫]
.
তাহক্বীক্বঃ বর্ণনাটি জাল। সনদগত ত্রুটি হলঃ বলা হয়ে থাকে আসওয়াদ আল আমেরী। অথচ মূল নাম হল জাবির ইবনু ইয়াযীদ ইবনুল আসওয়াদ আস সাওয়াঈ। [তাহযীবুত তাহযীব, দ্বিতীয় খণ্ড, ৪২ নং পৃষ্ঠা, রাবী ৯৩০] উপনাম হিসাবে আল আমেরী উল্লেখ করা হয়। সেটিও ভুল। মূলতঃ এই লক্বব হবে তার পূর্বের রাবীর নামের সাথে। অর্থাৎ ইয়ালা ইবনু আত্বা আল আমেরী। [তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৩৫১, রাবী ৮১৬৬]
.
Негізгі бет বাহাস ! বাহাস !! সালাফি বনাম হানাফি !!! ফরয নামাজের পর সম্মিলিত মুনাজাত বিদ’আত !
Пікірлер: 145