বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দূরে গোকুল গ্রামে খননের মাধ্যমে আবিস্কৃত হয় এই প্রত্ন নিদর্শন। প্রাচীন বাংলার লোকগাঁথা মনসামঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র বেহুলার বাসর হিসেবে সাধারণভাবে পরিচিত হলেও এর রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস। এটাকে গোকুল মেধও বলা হয়।
Contact email address for sponsorship, affiliate or other business purpose :
sumonmcj@yahoo.com
সংক্ষেপে প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস জানিয়ে দিয়েই ফিরবো বহুলা লক্ষিন্দরেই সেই কাহিনীতে।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তররের মতে আনুমানিক খৃস্টিয় ৬/৭ শতাব্দির মধ্যে এটি নির্মিত হয়। বলা হয়ে থাকে এখানে বেহুলার বাসর হয়েছিল। যা সেন যুগের অনেক পূর্বেকার ঘটনা। এরপর খ্রিষ্টিয় ১১-১২শতকে সেন আমলে এখানে একটি বর্গাকৃতির শিবমন্দির নির্মিত হয়েছিলো।
১৯৩৪-৩৬ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে ১৭২টি প্রকোষ্ঠের সমন্বয়ে ১৩মিটার উঁচু এ পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ উন্মোচিত হয়।
এখানে বহু গর্তযুক্ত একটি ছোট প্রস্তর খন্ডের সঙ্গে ষাঁড়ের প্রতিকৃতি একটি স্বর্ণ পত্র পাওয়া গিয়েছিল।
এ থেকে ধারণা করা হয়, এটি একটি বর্গাকৃতির শীব মন্দির ছিলো। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে এটাকে বৌদ্ধ মঠ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থে এই মেধকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নির্মাণ করা হয়েছিলো প্রাচীন বাংলার রাজধানী মহাস্থানগড় বা পৌণ্ড্রবর্ধনকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য।
কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে লোককথার সেই বেহুলার বাসর হিসেবেই অধিক পরিচিত এই পুরাকীর্তিটি। প্রাচীনকাল থেকেই লোকমুখে প্রচলিত ধারণা, এখানেই হয়েছিলো বেহলার বাসর।
চলুন, এবার জেনে নিই মনসামঙ্গল কাব্যের সেই লোককথা।
বেহুলা হলেন চাঁদ সওদাগরের কনিষ্ঠ পুত্র লখিন্দরের স্ত্রী।
চন্দ্রবণিক বা চাঁদ সওদাগর ছিলেন হিন্দু দেবতা শিবের একনিষ্ঠ পূজারী। তাই তিনি অন্য কোন দেবতার আরাধনা করতেন না। অপরদিকে শিবের কন্যা মনসা ছিলেন সর্পদেবী, কিন্তু তিনি কোথাও পূজিতা হতেন না। তাঁর পিতা শিব তাঁকে বলেন যে যদি কোন শিবের উপাসক প্রথম মনসার পূজা করেন তাহলেই মর্ত্যে তাঁর পূজার প্রচলন সম্ভব। তখন মনসা চাঁদ সওদাগরকে অনুরোধ করেন মনসা পূজার আয়োজন করার জন্য।কিন্তু চাঁদ সওদাগর মনসার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তখন ক্ষুব্ধ মনসা তাঁকে শাপ দেন যে, তাঁর সবগুলো পুত্রকে হত্যা করবেন তিনি। এরপর একে একে লখিন্দর ব্যতীত চাঁদ সওদাগরের ৬ছেলে সাপের ছোবলে মারা যায়।
বেচে থাকা একমাত্র ছেলে লখিন্দরের বিয়ের সময় চাঁদ সওদাগর অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে দেবতা বিশ্বকর্মার সাহায্যে এমন বাসর ঘর তৈরি করেন যা সাপের পক্ষে ছিদ্র করা সম্ভব নয়।
কিন্তু মনসা দেবীর হুমকিতে বাসর ঘরে একটি ছোট্ট ছিদ্র রেখেছিলেন বিশ্বকর্মা।
ওই ছিদ্র দিয়ে সাপ প্রবেশ করিয়ে বাসর রাতে লক্ষিন্দরকে হত্যা করে মনসা দেবী।
এরপর মৃত স্বামীকে নিয়ে ৬ মাস ভেলায় ভাসেন বেহুলা। পরবর্তীতে নানান ঘটনার পর বেহুলার ওপর সন্তুষ্ট হন মনসা দেবী।
বেহুলার অনুরোধে মনসাপূজা করতে শ্বশুর চাঁদ সওদাগর রাজি হলে লক্ষিন্দরের জীবন ফিরিয়ে দেন মনসা দেবী।
এই নিদর্শনটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ। এখানে তিন কোণ বিশিষ্ট ১৭২ টি কক্ষ আছে।
এ কক্ষগুলো দেখতে বেশ অস্বাভাবিক আর দুর্বোধ্য এর নির্মাণশৈলী। এর পশ্চিম অংশে আছে বাসর ঘরের স্মৃতিচিহ্ন। পূর্ব অংশে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চাসদৃশ একটি গোসলের ঘর। গোসলের ঘরের মধ্যে ছিল ৮ ফুট গভীর একটি কুপ।
প্রত্নতাত্বিক ইতিহাস আর লোককথার সেই বাসরের কাহিনী মানুষকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। তাইতো দূর দূরান্তর থেকে প্রতিদিনই এখানে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।
যেভাবে আসবেন :
বগুড়া শহরের চারমাথা থেকে গাইবান্ধা কিংবা রংপুরগামী যেকোনো বাসে করে গোকুল বাজারে নামতে হবে। ভাড়া নেবে ১০/১৫টাকা। এরপর সেখান থেকে ব্যাটারি চালিত ভ্যানে করে বেহুলার বাসরে যেতে খরচ হবে ১০টাকা। বগুড়া ৪মাথা থেকে ইচ্ছে করলে এক/দেড়শ টাকায় সিএনজি অটোরিকশাও রিজার্ভ করে আসতে পারেন এখানে। প্রবেশের সময় দেশী দর্শনার্থী ২০টাকা ও বিদেশী দর্শনার্থীকে নিতে হবে ২০০টাকার টিকিট।
কোথায় থাকবেন
বগুড়া শহরে অল্প খরচে থাকার অনেক হোটেল পাবেন।
#behular_bashor_ghor #bogra #gokul_medh
Негізгі бет বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসরঘর || প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস ও লোককথা || Behular Bashor Ghor
Пікірлер: 1,1 М.