সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও জাতির পিতা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি ও দেশব্রতে যুক্ত হন। বাঙালির মুক্তির সনদ হিসাবে পরিচিত ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে এক সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলে তিনি সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে নস্যাৎ করার জন্য ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পরে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালির এই অবিসংবাদিত নেতাকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার মহান দায়িত্বে ব্রতী হন। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে রাজবন্দি থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু এই আত্মজীবনী লেখা শুরু করেন এবং ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ঢাকা সেনানিবাসে আটক থাকার সময় তা লেখা বন্ধ হয়ে যায়। এ জীবনীগ্রন্থে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাবলি স্থান পেয়েছে। জীবনের অধিকাংশ সময় বঙ্গবন্ধু কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে কাটান। নির্ভীক, আপসহীন এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, গভীর উপলব্ধি ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ সহজ-সরল ভাষায় এ গ্রন্থে প্রকাশ পেয়েছে। ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনায় ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন ও জেল থেকে মুক্তিলাভের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে। বিনা বিচারে রাজবন্দিদের কারাগারে আটকে রাখার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহকর্মী মহিউদ্দিন অনশন ধর্মঘট করেন। অনশনকালে জেল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও আচরণ, নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাদের কাছে বার্তা পৌঁছানোর কৌশল এ রচনায় বর্ণিত হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রজনতার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণের খবর, অনশনরত অবস্থায় মৃত্যু আসন্ন জেনে মাতাপিতা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভাবনা এবং মুক্তি পেয়ে স্বজনদের কাছে ফিরে আসার স্মৃতিও বর্ণনা করা হয়েছে।
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাটি পড়ার সময় যে দিকগুলো ভালো করে খেয়াল করতে হবে-
‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনাটি শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারে অতিবাহিত দিনগুলোর স্মৃতিবিজড়িত সংকলন। বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের নানা বিষয় এবং বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এ রচনায় ফুটে উঠেছে। এ রচনাটি পড়ার সময় বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা, নির্ভীকতা, সরকারের অমানবিকতার বিরুদ্ধে দ্রোহ করার মানসিকতার স্বরূপ গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কেন অনশন করলেন? পাক-সরকারের স্বেচ্ছাচারিতায় কেন রাজবন্দিরা অনশনে বাধ্য হয়েছে? রাজবন্দিদের প্রতি জেলকর্তৃপক্ষের আচরণ কেমন ছিল? অনশনরত অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানে মৃত্যু ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ তৎপর ছিল কেন? জেল থেকে তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তৎপর ছিলেন কেন? জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পরিবারের সান্নিধ্যে এসে বঙ্গবন্ধুর অনুভূতি কেমন ছিল? বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার স্ত্রীর আবেদন কী ছিল এবং কেন তা করা হয়েছে? পরাধীন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ও স্বপ্ন কেমন ছিল? ভাষা আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে তার অনুভূতি, আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে তার দূরদর্শী বিশ্বাস কেমন ছিল? ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের জনগণের মনের পরিবর্তন কেন হলো-এসব দিক গভীরভাবে বুঝতে হবে। কোলের সন্তানদের কাছ থেকে বাবাকে দূরে রাখলে সন্তানদের ওপর তার প্রভাব কেমন হতে পারে তা বুঝতে হবে। ১৯৪৭ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সম্পর্কে তথ্য ও তত্ত্বগত ধারণা রাখতে হবে।
Негізгі бет Bayannor dingulo-Sheikh Mujibur Rahman ।। বায়ান্নর দিনগুলো - শেখ মুজিবুর রহমান ।। Bangla Story
No video
Пікірлер: 1