বিলুপ্তির পথে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঢোপকল | Rajshahi Traditional Dhopkol - BDCS
বাংলাদেশের শহরগুলোর মাঝে রাজশাহী নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রম নাম। এর শান্ত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। নির্মল ও শান্ত পরিবেশ উত্তরের এই শহরটিকে এনে দিয়েছে দেশজোড়া খ্যাতি।
প্রতিটি শহরেরই একটা অতীত ইতিহাস থাকে। থাকে কিছু ঐতিহ্য। এগুলো নিয়ে শহরের নাগরিকদের থাকে গর্ব। রাজশাহীও এর ব্যতিক্রম নয়। রাজশাহীর আছে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। আধুনিক মহানগরীর ভাঁজে ভাঁজে এখনও দেখা যায় সেসব ঐতিহ্যের কিছু কিছু নিদর্শন। এমনই এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো রাজশাহীর ঢোপকল। আজ আপনাদের সেই ঢোপকল সম্পর্কে জানাবো-
একসময় রাজশাহী শহরে বিশুদ্ধ পানযোগ্য পানির খুব অভাব ছিল। যার ফলশ্রুতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা-আমাশয় সহ নানারকম পেটের পীড়া। বেশ কিছু লোকের মৃত্যুও ঘটেছিল সেসময় এই অসুখের জন্য। ১৯৩৪ সালে রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন রায় ডি এন দাশগুপ্ত। এই দুর্দশা লাঘবে তিনি শহরে পাইপলাইনের মাধ্যমে সুপেও পানি সরাবরাহ উদ্যোগ নেন। এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়ায় জনকল্যানমূলক সংগঠন রাজশাহী এসোসিয়েশন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা দানশীল ও ধন্নাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান জানান।
সেসময়ে পুঠিয়ার মহারানী ছিলেন হেমন্তকুমারি। এই উদ্যোগের কথা শুনে তিনি একাই দান করেন ৬৫ হাজার টাকা। টাকা সংগ্রহের পর নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে নির্মান করা হয় পানি শোধনাগার। এতে ব্যয় হয় ২ লাখ ৫৩ হাজার ২৮৫ টাকা। মহারানী হেমন্তকুমারির বিরাট অংকের দানের কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এর নাম রাজশাহী ওয়াটার ওয়ার্কসের বদলে দেওয়া হয় মহারানী হেমন্তকুমারি ওয়াটার ওয়ার্কস। ১৯৩৭ সালে ১৪ আগস্ট যাত্রা শুরু করে মহারানী হেমন্তকুমারি ওয়াটার ওয়ার্কস। যেখানে পানি সরবরাহের জন্য পাইপগুলো হয় কাস্ট আয়রনে তৈরি ও বাকি দ্রব্যগুলো পিতলের। আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বানিয়ে আনা হয় ব্রিটেন (ইংল্যান্ড) থেকে। সেদিনের পৌরসভার প্রতিটি মোড়সহ প্রায় একশ’ পয়েন্টে বসানো হয় হেমন্ত কুমারী ওয়াটার ওয়ার্কস। চার ফুট ব্যাসের এসব কল ভূমি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু। তৈরি করা হয় ইটের খোয়া ও সিমেন্টের ঢালাইয়ে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত টিনের মতো ঢেউ খেলানো প্লাস্টার দিয়ে। এই হেমন্ত কুমারী ওয়াটার ওয়ার্কসই পরে হয়ে ওঠে পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় বিশুদ্ধ পানির আধার। লোকমুখে হেমন্ত কুমারীর ঢোপকল নামেই এই ওয়াটার ওয়ার্কস পরিচিতি লাভ করে।
সেসময়ে প্রতিদিন সাত শ’ বর্গমিটারের এই ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধন করা যেত। পানি শোধন কেন্দ্রে আয়রন ম্যাঙ্গানিজ ও ক্ষার দূর করারও ব্যবস্থা ছিল। এভাবেই পরিশোধিত পানি নগরীর ঢোপকলে পৌঁছে যেত। ঢোপকলগুলোর প্রতিটিতে পানির ধারণক্ষমতা ৪৭০ গ্যালন। প্রতিটি ঢোপকলেই ছিল একটি করে রাফিং ফিল্টার, যার মধ্য দিয়ে সরবরাহ করা পানি পরিশোধিত হয়ে বের হতো। দিনে দুই ঘণ্টার পানি সরবরাহে ঢোপকলগুলো ভরে যেত আর দিনভর নগরবাসী পেতেন সুপেয় পানি। কালের বিবর্তনে ঢোপকল আজ প্রায় বিলুপ্ত। একসময় যে ঢোপকলগুলো শহরের মোড়ে মোড়ে দেখা যেত তা আজ সংখ্যায় নেমে এসেছে হাতেগোনা কয়েকটি। তা-ও অনেকটা আজ অবহেলা, অযত্নে দাড়িয়ে রয়েছে। শহরে কয়েকটি অব্যবহৃত ঢোপকলের সংরক্ষণ হলেও সচল ঢোপকলের ২-১ টি এখনও অযত্নে। এলাকাবাসীর দাবী কালের সাক্ষী এই ঢোপকলগুলো না ভেঙে রক্ষণাবেক্ষন ও সংরক্ষণ করা হোক তাহলে ঐতিহ্য ধরে রাখাসহ অসংখ্য মানুষ সুপেও পানী পান ও ব্যবহারের সুযোগ পাবে।
Негізгі бет বিলুপ্তির পথে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী ঢোপকল | Traditional Dhopkol | Rajshahi - BDCS
Пікірлер: 5