শারীরিক কষ্ট : দেখুন যতদিন আমাদের শরীর আছে, ততদিন আমাদের শারীরিক ব্যাধির শিকার হতে হবে। সারাজীবন কেউ যদি সুস্থ থাকেও তথাপি মৃত্যু আসন্ন হলে তাকে অবশ্যই ব্যাধিগ্রস্থ হতে হবে। ভগবানের মৃত্যুর দূত এরা। যমরাজ নিজে এই ব্যাধিরূপ দূতকে পাঠিয়ে জীবকে তাঁর কাছে টেনে আনেন। ভগবান যখন এই শরীর তৈরী করেছেন, তখন তিনি এই শরীরের মধ্যে মৃত্যু রূপেই অবস্থান করছেন। জীবের জন্ম হলেই জানবেন, তিনি মৃত্যুর ছায়া দ্বারা আচ্ছাদিত। জীবনে একমাত্র সত্য হচ্ছে মৃত্যু। আর মৃত্যুর দূত হচ্ছে শারীরিক ব্যাধি। আপনি যতই ডাক্তারের কাছে থাকেন, এমনকি আপনি যদি নিজেও ডাক্তার হন, তথাপি এই ব্যাধি আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে না।
তবে হ্যাঁ, ভারতের মুনি ঋষিগণ হাজার হাজার বছর পরীক্ষা করে, এই সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন যে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হলেও, অকালমৃত্যু রোধ করা, বা শারীরিক ব্যাধিকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব। আর এর জন্য তারা নানান রকম যোগক্রিয়ার কথা বলেছেন, আহার-বিহারে সংযমের কথা বলেছেন।
আর বৃদ্ধ বয়সে এই কাজটা খুবই সহজ। কেননা এই বয়সে আপনার কাছে অবসর সময় প্রচুর। জীবনে একটা নিয়মানুবর্তিতা আনুন। একটা রুটিন তৈরী করুন। আর সেই রুটিনের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলুন। একটা কথা জানবেন, শৃঙ্খলা মানুষের জীবনে শুদু সাফল্য নয়, শান্তিও এনে দিতে এনে । অনুলোম বিলোম করুন, কাপালভাতি করুন। মনোযোগ দিয়ে রেচক-পূরক-কুম্ভক করুন। শ্বাসের গতিকে রুদ্ধ করে বাহ্য কুম্ভব ও অন্তঃ কুম্ভক করুন। জানবেন, কুম্ভক মানুষের জীবনের আয়ু বর্দ্ধিত করে দেবার অলৌকিক ক্ষমতা রাখে। শ্বাসের গতিকে ধীর করুন। কিছু না পারেন, স্বাসের দিকে খেয়াল রেখে একঘন্টা চুপচাপ শ্বাসের সঙ্গে জীবন অতিবাহিত করুন। এতে করে আপনার শারীরিক অসুস্থতা শুধু নয়, আপনার মধ্যে মানসিক শান্তি অনুভৱ করবেন। একটা অহৈতুকী আনন্দ অনুভব করতে থাকবেন। এশুধু কথার কথার নয়, ভারতের মুনি-ঋষিদের পরীক্ষিত এই সত্য আজও সমান ভাবে কার্যকরী। আমার মনে হয়, যোগ মানুষকে ডাক্তারবিমুখ করে দিতে পরে। যোগের অসীম শক্তি যা মুখে বলে শেষ করা যাবে না। তো আপনার বয়স হয়েছে, আপনার, যথেষ্ট সময় আপনার হাতে, আপনি সকালে একঘন্টা আর সন্ধ্যায় এক ঘন্টা এই যোগের মধ্যে কাটাবার অভ্যাস করুন। বেশিক্ষন থাকতে পারলে তো আরো ভালো। দেখবেন আপনার সব দুঃখ, তা সে শারীরিক হোক বা মানসিক, সব অশান্তির নাশ হবে। সব দুঃখের অতীতে চলে যাবেন আপনি।
নিঃসঙ্গতা : বৃদ্ধ বয়সে সবচেয়ে বড়ো কষ্ট হচ্ছে নিঃসঙ্গতা। বৃদ্ধ বয়সে বহু মানুষ নিঃসঙ্গ হয়ে যান। এর প্রথম কারন হচ্ছে, বৃদ্ধ বয়সে আমাদের সবাইকেই কর্ম্মজীবন থেকে অবসর নিতে হয়। কর্ম্মজীবনে যত বন্ধু তৈরী হয়েছিল, তাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগাযোগ বন্ধ হতে থাকে। একসময় এই কর্ম্ম জীবনের বন্ধুরাও অবসর নেয়। এবং ধীরে ধীরে সবাই ঘরবন্দি হয়ে যায়। ফল হচ্ছে, আমরা সবাই বন্ধুহীন হয়ে যাই। আরো একটা কথা হচ্ছে, কর্ম্ম জীবনে আমরা ব্যস্ত থাকবার কারনে, আমরা নিজের আত্মীয় স্বজন থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। এই বিচ্ছন্নতা আর সহজে জোড়া লাগে না। নিজের স্বার্থে, নিজের কর্ম্ম ব্যস্ততার কারনে, এমনকি শুধুই নিজের উন্নতি, নিজের ভালো নিজের সুবিধে দেখতে গিয়ে আমরা আত্মীয়স্বজন থেকে এমনকি নিজের ভাইবোন থেকেও নিজেকে আলাদা করে ফেলেছি। এই ফাটল আর বৃদ্ধ বয়সে এসে জোড়া লাগানো যায় না।
মৃত্যু ভয় : একটা সময় আসে, যখন আমাদের বন্ধুবান্ধবদের মৃত্যু সংবাদ আসতে থাকে। ফলত নিঃসঙ্গতা বাড়তেই থাকে, এমনকি মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমিও একদিন এই পৃথিবী ছেড়ে ওদের মতো চলে যাবো। মৃত্য সম্পর্কে আমাদের সবার একটা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। আর এই অভিজ্ঞতা আমাদের একটা ভয়ঙ্কর অন্ধকারের বিভীষিকা। আমরা যে কতবার মৃত্যুর নমুখীন হয়েছি, তা আমাদের কারুর মনে নেই, কিন্তু মৃত্যু যেন আমাদের কাছে একটা বিষাদময় অবস্থা, আমাদের আত্মীয় পরিজন, একটা সুরক্ষার বলয় ছেড়ে একটা অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়াচ্ছে দেখে একটা অজানা আশঙ্কা আমাদেরকে ঘিরে ফেলে। আমরা ভীত হই। কিন্তু জানবেন, মৃত্যু একটা রূপান্তর মাত্র। আমরা যেমন শিশু থেকে কৈশোরে, কৈশোর থেকে যৌবনে, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বে, এবং প্রৌঢ় অবস্থা থেকে বৃদ্ধ অবস্থায় চলে যাই, কিন্তু আমি সেই একই থাকি, ঠিক তেমনি মৃত্যু একটা রূপান্তর মাত্র। এই মৃত্যুর দ্বার পার করে আমরা স্থূল শরীর থেকে সূক্ষ্ম শরীরে প্রবেশ করি, স্থূল থেকে সূক্ষ্ম জগতে প্রবেশ করি । আর এই সূক্ষ্ম জগতের কথা বলা হলো, সেই সূক্ষ্ম জগৎও এই স্থূল জগতের অনুরূপ একটা জগৎ। তো মৃত্যু যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি মৃত্যু কোনো বিভীষিকা নয়, বরং মৃত্যুতে আমরা একটা নতুন দেহ পেতে চলেছি। যে বৃদ্ধ দেহে, যে অচল দেহে এখন আমাকে থাকতে হচ্ছে, তার থেকে মুক্তি এনে দিতে পরে আমাদের মৃত্যু।
সবশেষে বলি, জীবন দুদিনের খেলাঘর। আমরা সবাই এই খেলাঘরে এসেছি দুদিনের তরে অভিনয় করতে। পাঠ শেষ হয়ে গেলে, আমরা আবার মঞ্চ থেকে নেমে আসবো। ৭০/৮০/১০০ বছরের এই কর্ম্মদেহ একদিন অকেজো হয়ে যাবে। যাবেই, এই নিয়ম স্বয়ং ঈশ্বরও ভাঙতে পারেন না। তো আমরা তো সামান্য জীব। তথাপি যে কথাগুলো আজ আমরা শুনলাম, তা যদি আমরা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তবে বৃদ্ধ বয়সে আমরা অবশ্যই ভালো থাকতে পারবো। শুধু ভাবুন, আমি তো ভালোই আছি, কেন ভালো থাকবো না, আমি তো অমৃতের সন্তান। আনন্দই আমার স্বভাব। আমিই সেই সৎ-চিৎ-আনন্দের অংশ।
ETERNAL PEACE SEEKER - SASANKA SEKHAR PEACE FOUNDATION
Негізгі бет বৃদ্ধ বয়সে ভালো থাকবেন কি করে ? - OLDAGE PROBLEM AND ITS' SOLUTION ETERNAL PEACE SEEKER - SSPF
Пікірлер: 8