দেবী দুর্গা মানে দশভুজা, দেবী দুর্গা মানে মহাশক্তি, মহামায়া, দেবী দুর্গা মানে মাতৃরূপী, শক্তিরূপী, বিপদতারিণী স্নেহময়ী জননী। দুর্গা নামে সবাই চিনি, দশ হাতধারী মোহময়ী এক নারী মূর্তি, যিনি প্রতি বছর শরৎকালে পুত্র-কন্যা নিয়ে স্বামীর বাড়ি স্বর্গলোক থেকে বাবার বাড়ি মর্ত্যলোকে আসেন এবং তিনি বাংলা মুলুকেই আসেন। আমরা অনেকেই জানি না, দেবী দুর্গা শুধু শরৎকালেই মর্ত্যলোকে আসেন না, শুধু বাংলা মুলুকেই আসেন না, ভক্তের ডাকে দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকের যে কোনো স্থানে নানারূপে আবিভর্‚ত হন। দুর্গা মায়ের চিরায়ত দশভুজা রূপ ছাড়াও মায়ের আরও নয়টি রূপ আছে, যখন যেরূপে আবিভর্‚ত হওয়া দরকার, দেবী দুর্গা সেরূপেই আবিভর্‚ত হয়ে থাকেন। দেবী দুর্গার নয়টি রূপের সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় নেই। সব রূপেই দেবী মহাশক্তির আধার, প্রতি রূপেই দেবী মাতৃরূপা, কল্যাণময়ী, অশুভ শক্তি বিনাশিনী দেবীর অনেক রূপের মাঝে নয়টি রূপ বিশেষভাবে, বিশেষ লগ্নে পুজিত হয়ে থাকে। শৈলপুত্রী, ব্রহ্মচারিণী, চন্দ্রঘণ্টা, কুশমণ্ডা, স্কন্দমাতা, কাত্যায়নী, কালরাত্রি, মহাগৌরী, সিদ্ধিদাত্রী-মহাশক্তি রূপে দেবী দুর্গা দেবকুল, সাধককুল, ভক্তকুলে পুজিত হয়ে থাকেন।
দুর্গা শৈলপুত্রী : শৈলপুত্রী মানে পাহাড়ের কন্যা। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা হচ্ছেন শৈলপুত্রী, দেবী দুর্গার নয় রূপের প্রথম রূপ। শৈলপুত্রী তার পূর্বজন্মে ছিলেন দক্ষরাজার কন্যা, নাম ছিল সতী, ভবানী। সতীদেবীর বিয়ে হয়েছিল ভোলানাথ শিবের সঙ্গে। ভোলানাথ শিব বেখেয়াল, সংসারে মন নেই, তাই সতীদেবীর পিতা দক্ষরাজ জামাতার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন না। পিত্রালয়ে স্বামীর অপমান সতীদেবী সইতে পারেননি, যজ্ঞের আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন। পরের জন্মে সতীদেবী হিমালয় রাজের কন্যা হয়ে জন্মগ্রহণ করেন, নাম হয় পার্বতী-হেমবতী। এই জন্মেও শিবের সঙ্গেই পার্বতীর বিবাহ হয়। উপনিষদে আছে, দেবী পার্বতী মহাশক্তির আধার। সব দেবতা দেবী পার্বতীর শক্তির মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অবনত মস্তকে স্বীকার করেন যে ভগবান ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবসহ সব দেবতা পার্বতীর শক্তিতে বলীয়ান।
ব্রহ্মচারিণী : দেবী দুর্গার দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী, দেবী ব্রহ্মচারিণীর মূর্তি খুবই চাকচিক্যমণ্ডিত। দেবীর ডান হস্তে পদ্মফুল, বামহস্তে কমণ্ডলু। দেবী ব্রহ্মচারিণী আনন্দময়ী, সুখের আধার। দেবী ব্রহ্মচারিণী তার পূর্বজন্মে ছিলেন হিমালয় কন্যা দেবী পার্বতী-হেমবতী।
চন্দ্রঘণ্টা : দেবী দুর্গার তৃতীয় রূপ হচ্ছে চন্দ্রঘণ্টা। তার কপালে অর্ধাকৃতি চন্দ্র শোভা পায়। দেবী চন্দ্রঘণ্টা অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং মোহময়ী। গাত্রবর্ণ স্বর্ণোজ্জ্বল, ত্রিনয়নী দেবী চন্দ্রঘণ্টার দশ হাত।
কুশমণ্ডা : দেবী দুর্গার চতুর্থ রূপ কুশমণ্ডা। দেবী কুশমণ্ডা অমিত শক্তির অধিকারী, তার মৃদু হাসির রেশে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেবী কুশমণ্ডার আট হাত, আট হাতের সাতটি হাতে শত্রুনিধন মারণাস্ত্র শোভা পায়, ডান পাশের এক হাতে ধরা থাকে পদ্মফুল। দেবী কুশমণ্ডার বাহন ‘সিংহ’।
স্কন্দমাতা : দেবী দুর্গার পঞ্চম রূপ হচ্ছে দেবী স্কন্দমাতা। পর্বতরাজ হিমালয়ের কন্যা তিনি, শিবের ঘরণী। তার পুত্রের নাম ‘স্কন্দ’, স্কন্দ দেবতাদের সেনাবাহিনীর অধিনায়ক। স্কন্দদের মা, তাই স্কন্দমাতা।
কাত্যায়নী : দুর্গার ষষ্ঠতম রূপটি হচ্ছে দেবী কাত্যায়নী। ঋষি কাত্যায়নের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী দুর্গাকন্যা ‘কাত্যায়নী’ রূপে ঋষি কাত্যায়নের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। দেবী কাত্যায়নীর আট হাত, প্রতি হাতে ধরে আছেন শত্রু নিধনের জন্য মারণাস্ত্র। দেবী কাত্যায়নী ত্রিনয়নী, তার বাহন সিংহ।
দেবী কালরাত্রি : দুর্গার সপ্তম রূপ হলো ‘কালরাত্রি’। দেবী কালরাত্রির গায়ের রং নিকষ কালো, মাথার চুল খোলা। গলার মালায় বিদ্যুৎ চমকায়। দেবী কালরাত্রি ত্রিনয়নী অর্থাৎ তিনটি চোখ এবং তিনটি চোখের গড়ন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মতো গোলাকার।
মহাগৌরী : দুর্গার অষ্টম রূপের নাম ‘মহাগৌরী’। আট বছর বয়সী দেবী মহাগৌরীর গাত্রবর্ণ শঙ্খ, চাঁদ অথবা জুঁই ফুলের মতো সাদা। শুধু গাত্রবর্ণই নয়, তার পরিধেয় বস্ত্র, অলঙ্কারও শ্বেত-শুভ্র। দেবী মহাগৌরীর বাহন ষাঁড়, ষাঁড়ের পিঠে উপবিষ্ট অষ্টমবর্ষী মহাগৌরী দেবী ত্রিনয়নী, প্রতি পাশে দুই হাত মিলিয়ে তার হাতের সংখ্যা চার।
সিদ্ধিদাত্রী-মহাশক্তি : দুর্গার মায়ের নবম রূপটি সিদ্ধিদাত্রী হিসেবে পুজিত হয়। সিদ্ধির আট প্রকার : অনিমা, মহিমা, গরিমা, লঘিমা, প্রাপ্তি, প্রকাম্য, ঈষিতভা, (ঈষিত্ব) ভাষিতভা (ভাষিত্ব)। মহাশক্তি এই আটটি সিদ্ধি পূরণ করেন। ‘দেবীপুরাণে’ বলা হয়েছে, স্বয়ং শিব দেবী মহাশক্তির সাধনা করে সকল সিদ্ধি লাভ করেছেন, সিদ্ধিলাভের পর দেবী মহাশক্তির ইচ্ছায় শিবের দেহের অর্ধেক নারীত্ব লাভ করে, যে কারণে শিব ঠাকুর ‘অর্ধনারীশ্বর’ রূপে বিখ্যাত। দেবী মহাশক্তির চার হাত, সিংহের পিঠে আসন গ্রহণ করেছেন, দেবী মহাশক্তির মুখশ্রীতে সর্বদা সন্তুষ্টির ছাপ দেখা যায়।
দেবী মহাশক্তির সাধনা করে দ্যুলোক-ভুলোকের সবাই, স্বর্গলোক, মর্ত্যলোকের সবাইকে। সব দেবদেবী, মুনি ঋষি, সাধক, সিদ্ধপুরুষ, সিদ্ধা নারী, ভক্তকুলের সবাই দেবী মহাশক্তির আরাধনা করেন। জগতের সব প্রাণী সুখী হোক, সবার প্রতি দেবী দুর্গার আশীর্বাদ বর্ষিত হোক।
------------------------------------------------
Devi Durga Rup Barnona
Perform - Suman Bhattacharya | সুমন ভট্টাচার্য
Organized by - Sristi Sukh | Berhampore
Video & Documentation - Suman Kumar Saha
Video Canon 2000D and Audio Zoom H6
-
#সুমন_ভট্টাচার্য #SumanBhattacharya #Kirton
সুমন ভট্টাচার্যের কীর্ত্তন ব্যাখার অন্যান ভিডিও - • চন্ডী পাঠ || Chandi Pa...
---
Негізгі бет Музыка দেবী দুর্গার আসল রুপ কেমন ? SUMAN BHATTACHARYA | শাক্ত পদাবলি
Пікірлер: 98