আজ ২২শে শ্রাবণ, ১৪৩১ (ইং ৭ই আগস্ট, ২০২৪) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস। কথাটা লিখেই মনে হল রবীন্দ্রনাথের কি প্রয়াণ দিবস বলে কিছু হয় - বিশেষত যে সকল মানুষ তাঁদের জীবনে, যাপনে, চিন্তায়, মননে রবীন্দ্রনাথকে আশ্রয় করে চলেন? পর মুহূর্তেই এও মনে হল - হয়তো হয় - কোনো বিশেষ দিন লাগে না তার জন্য - যখনই আমরা মনুষ্যত্বের বলি দিয়ে পশুত্বকে বরণ করি - যখন আমরা জ্ঞানত, জ্ঞাতসারে নিজেদের আত্মার পদস্খলন ঘটাই, তখন আমাদের অন্তরে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। তাই রবিন্দ্রচেতনা নিয়ে যারা বাঁচেন, রাবিন্দ্রকতা যাঁদের জীবনে বাঁচার রসদ, তাঁদের কাছে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিন বলে কিছু হয় না - বরঞ্চ প্রতিদিনই মনে হয় রবীন্দ্রনাথ জীবনের আরেকটু অংশ হয়ে উঠলেন, মনে হয় তাঁকে বলি - তুমি নব নব রূপে এস প্রাণে…
আজ ২২শে শ্রাবণে রইলো দেবব্রত বিশ্বাসের কণ্ঠে এক ডজন রবীন্দ্রসঙ্গীত যার মধ্যে ‘শ্রাবণ’ শব্দটি ঘুরে ফিরে এসেছে বারংবার। সংকলন করতে বসে দেখলাম আষাঢ়ের বদলে রবীন্দ্রনাথ শ্রাবণ নিয়ে গান লিখেছেন অনেক বেশী। অবশ্য এমনও বর্ষার গান প্রচুর আছে যেখানে আষাঢ় বা শ্রাবণ কোনোটাই বলা হয় নি। এই গানগুলি যার কাছ থেকে পেয়েছি, তিনি কুবেরের ভাণ্ডারের মালিক, প্রাক্তন IAS, শ্রী অধীপ চৌধুরী। তাঁর জর্জকাকার কাছ থেকে প্রাপ্ত গান তিনি নির্দ্বিধায় আমাকে তো দিয়েইছেন, উপরন্তু লিখিত permission দিয়েছেন, তা ইউটিউবে আপলোড করার জন্য। অধীপ বাবুর কাছে আমি তো বটেই, সমগ্র দেবব্রত বিশ্বাস ভক্তমণ্ডলী চিরকৃতজ্ঞ থাকবে চিরকাল।
বর্ষার গান নিয়ে কথা বলতে গিয়ে, দেবব্রত বিশ্বাস সম্পর্কিত কয়েকটি টুকরো কথা/ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রাণী সেন, দেবব্রত বিশ্বাসের প্রিয় ছাত্রী একটি ইন্টারভিউতে একদা স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছিলেন - “এমনও হয়েছে, বাইরে কাঠফাটা রদ্দুর; ঘরে মাস্টারমশাই গান ধরলেন, ‘এসেছিলে তবু আস’ নাই, জানায়ে গেলে’। যখন গাইছেন, ‘তখন পাতায় পাতায় বিন্দু বিন্দু ঝরে জল’, তখন মনে হত বাইরে সত্যিই বৃষ্টি নেমেছে।“ প্রায় একই কথা আমাকে বলেছিলেন সঞ্জয়দা , প্রখ্যাত চলচ্চিত্র গবেষক ও অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। সঞ্জয়দা বলেছিলেন, ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের নিকটস্থ ওই একটেরে ঘরে যখন জর্জদা বর্ষার গান গাইতেন, তখন রাসবিহারী এভিনিউ গড়িয়াহাট চত্তরে বৃষ্টি নামত - যেমনটি নামত মিয়া তানসেন যখন মিয়া কি মল্হার গাইতেন ফতেপুর সিক্রির কোনো অলিন্দে বসে। দেবব্রত বিশ্বাসের প্রথম বায়োগ্রাফার, চন্দন দাশশর্মা আমাকে দেবব্রত বিশ্বাসের বর্ষার গান গাওয়া নিয়ে আরেকটি গল্প বলেছিলেন। চন্দনদা বলেছিলেন, আষাঢ় মাসে অনুষ্ঠিত কোনো এক অনুষ্ঠানে দেবব্রত বিশ্বাসকে শ্রাবণের একটি গান গাইতে অনুরোধ করা হলে তিনি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এটা তো আষাঢ় মাস - আমি শ্রাবণের গান গাইবো কেন?” এতটাই সচেতন ছিলেন তিনি নিজের গান সম্পর্কে। আবার আরও একটি বিবরণে অন্য এক একাকী দেবব্রত বিশ্বাসের ছবি পেয়েছিলাম। জনৈক লেখিকা লিখেছিলেন এক বর্ষার দুপুরে দেবব্রত বিশ্বাসের বাড়ীতে ঢুকতে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন বাড়ীর সামনের একফালি সরু গলিতে রেনকোট পরিহিত জর্জদা ছাতা মাথায় দিয়ে মোড়ায় বসে একাত্ম হয়ে একের পর এক বর্ষার গান গেয়ে চলেছেন।
শ্রাবণের গান কেমন লাগলো জানাবেন। আপনাদের মনের আকাশে জর্জদার দেবদুর্লভ কণ্ঠের এই সব গান যে সজল ছবি এঁকে যায়, তার খবর পেলে আমারও মন ভরে ওঠে।
নমস্কারান্তে,
জয়ন্তানুজ ঘোষ
২২শে শ্রাবণ, ১৪৩১
Негізгі бет Debabrata Biswas LIVE in the 1970s - 39 (শ্রাবণগগন অঙ্গনে দেবব্রত-শ্রাবণ মাসের বারোটি রবিগানের সংকলন
Пікірлер: 21