আমাদের বেশির ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে মেডিক্যাল ভাষায় সারভাইক্যাল স্পাইন বলে। মেরুদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় গঠিত। মাথার হাড় (স্কাল) থেকে মেরুদণ্ডের সপ্তম কশেরুকা পর্যন্ত ঘাড় বিস্তৃত। আট জোড়া সারভাইক্যাল স্পাইন নার্ভ (স্নায়ু) ঘাড়, কাঁধ, বাহু, নিচু বাহু এবং হাত ও আঙুলের চামড়ার অনুভূতি ও পেশির মুভমেন্ট প্রদান করে। । ঘাড়ের সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়।
ঘাড় ব্যথায় সাধারণত নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখা দেয়-
► মাথা দীর্ঘ সময় ধরে একভাবে রাখলে, যেমন ড্রাইভিং করলে কিংবা কম্পিউটারে কাজ করলে ঘাড় ব্যথা বেড়ে যায়।
► মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় ও সংকুচিত হয়।
► মাথা নাড়ানোর ক্ষমতা লোপ পায়।
► মাথা ব্যথা করে ইত্যাদি।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
► ঘরোয়া চিকিৎসায় বেশির ভাগ ঘাড় ব্যথা কমে যায়। যদি ব্যথা না কমে কিংবা অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
► ঘাড় ব্যথাটা আঘাতের কারণে হয়, যেমন গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট, ড্রাইভিং কিংবা ওপর থেকে পড়ে যাওয়া-তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
► যদি ঘাড় ব্যথা তীব্র হয়, ব্যথা না কমে একটানা কয়েক দিন স্থায়ী থাকে, হাতে বা পায়ে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে, ঘাড় ব্যথা, সঙ্গে মাথা ব্যথা, অবশ ভাব, দুর্বলতা কিংবা ঝিনঝিন অনুভূতি থাকে, তাহলেও দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ঘাড় ব্যথার কারণ
মাংসপেশির টান : ঘাড়ের অতিরিক্ত ব্যবহার, যেমন বেশ কয়েক ঘণ্টা কম্পিউটার বা স্মার্টফোনে ঘাড় বাঁকা করে কাজ করা। এতে ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান পড়ে। অনেক সময় ছোট জিনিস থেকেও ঘাড়ের পেশিতে টান পড়তে পারে, যেমন বিছানায় শুয়ে বই পড়া।
অস্থিসন্ধি ক্ষয় হওয়া : শরীরের অন্যান্য জয়েন্টের মতো ঘাড়ের জয়েন্টগুলোও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়ে যায়। অস্টিও আর্থ্রাইটিস দুই কশেরুকার মাঝখানের কার্টিলেজ বা তরুণাস্থিকে ক্ষয় করে। এরপর সেখানে ছোট ছোট হাড়ের সৃষ্টি হয়, যা জয়েন্টের নড়াচড়ায় বাধা দেয় এবং ব্যথা করে।
স্নায়ুতে চাপ লাগা : ঘাড়ের স্থানচ্যুত ডিস্ক বা কশেরুকার মধ্যকার ছোট হাড়ের টুকরাগুলো স্পাইনাল কর্ড থেকে বেরিয়ে আসা নার্ভের শাখা-প্রশাখার ওপর চাপ দেয়, ফলে ঘাড় ব্যথা হয়।
আঘাত : কোনো গাড়িতে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে যদি অন্য কোনো গাড়ি আঘাত করে, তাহলে মাথা পেছন দিকে ঝাঁকি খায়, এতে ঘাড়ের নরম টিস্যুগুলোতে টান লাগে ও ব্যথা হয়।
কিছু রোগ : কিছু রোগ ঘাড় ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, মেনিনজাইটিস অথবা ক্যান্সার।
প্রতিরোধে করণীয়
বেশির ভাগ ঘাড় ব্যথা দুর্বল অঙ্গভঙ্গি ও বয়সসম্পর্কিত হাড় ক্ষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঘাড় ব্যথা প্রতিরোধ করতে দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করুন।
ঘাড় সোজা রাখুন : যখন দাঁড়াবেন কিংবা বসবেন, আপনার দুই কাঁধ যেন হিপ বরাবর সোজা থাকে। আর আপনার কান দুটি যেন সরাসরি আপনার দুই কাঁধের ওপর থাকে।
মাঝেমধ্যে বিরতি নিন : যদি দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করেন, অথবা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে কাজ করেন, তাহলে মাঝেমধ্যে উঠে দাঁড়াবেন, হাঁটবেন এবং ঘাড় প্রসারিত করবেন।
ডেস্ক, চেয়ার ও কম্পিউটার সমন্বয় করুন : এ ক্ষেত্রে মনিটর চোখ বরাবর থাকবে। দুই হাঁটু হিপের কিছুটা নিচে থাকবে। চেয়ারে আর্মরেস্ট বা হাতল ব্যবহার করা যেতে পারে।
কান ও কাঁধের মাঝে ফোন রাখা বন্ধ করা : খেয়াল রাখুন, ফোনে কথা বলার সময় যেন সেটি কান ও কাঁধের মাঝে ঠেসে না থাকে। প্রয়োজনে হেডসেট অথবা স্পিকার ফোন ব্যবহার করুন।
ধূমপান ছাড়ুন : যদি ধূমপায়ী হন, আজই ধূমপান ত্যাগ করুন। ধূমপান কাঁধে ব্যথার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
কাঁধে ব্যাগ বহন নয় : কাঁধে ফিতাওয়ালা ব্যাগ বহন করবেন না। ব্যাগের ওজনে ঘাড়ে টান পড়ে ও ব্যথা বাড়ে।
ভালো ভঙ্গিতে ঘুমান : এমনভাবে ঘুমাবেন, যাতে মাথা ও ঘাড় শরীরের একই সারিতে থাকে। ঘাড়ের নিচে ছোট একটি বালিশ দিন। চেষ্টা করুন, ঊরুর নিচে একটি বালিশ দিয়ে ঊরু একটু উঁচুতে রেখে চিত হয়ে ঘুমাতে। এতে পিঠের মাংসপেশিগুলো চ্যাপ্টা থাকবে।
ব্যথা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ঘাড়ের পেশির স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি বাড়ায় ফিজিওথেরাপির এই ব্যায়ামগুলো।
ঘাড় ঘোরানো: ধীরে ধীরে ঘাড় যে কোনো একদিকে ঘোরাতে হবে এবং সেভাবেই ধরে রাখতে হবে পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড। চেষ্টা করতে হবে ঘাড় ঘোরানোর সময় চোয়াল যেন একই উচ্চতায় থাকে। এবার যেদিকে ঘাড় ঘুরিয়েছিলেন তার উল্টা দিকে ঘাড় ঘোরাতে হবে এবং আবারও পাঁচ থেকে সাত সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। এভাবে একটানা মোট পাঁচবার ব্যায়ামটি করতে হবে।
উপরে-নিচে ঘাড় বাঁকানো: ঘাড় ব্যথা সারানোর সবচাইতে সহজ ব্যায়াম এটাই। শরীর সোজা রেখে শুধু ঘাড় বাঁকা করে চোয়াল ছোঁয়াতে হবে বুকে। সেভাবে পাঁচ সেকেন্ড থাকতে হবে এবং আবার স্বাভাবিক হতে হবে। এভাবে পাঁচবার ব্যায়ামটি করতে হবে।
ডানে-বামে ঘাড় বাঁকানো: দুই কাধ সোজা রেখে শুধু ঘাড় বাঁকা করতে হবে ডান কাঁধের দিকে, পাঁচ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। তারপর কিছুক্ষণ মাথা সোজা রেখে বাম কাঁধের দিকে ঘাড় বাঁকা করতে হবে এবং পাঁচ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। আবারও মাথা সোজা। এভাবে করতে হবে পাঁচ বার।
কাঁধ টানটান: শরীর সোজা রাখতে হবে। এবার ঘাড় সামনের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে আর দুই কাঁধ পেছনে টান দিয়ে রাখতে হবে। এই অবস্থান পাঁচ সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে হবে। এই ব্যায়ামও পাঁচ বার করতে হবে।
Негізгі бет ঘাড় ব্যথা? সমাধানও আপনার হাতে। ব্যথা নির্মূলের ফুল কোর্স ব্যায়াম ম্যানুয়াল। Neck Pain.
Пікірлер: 54