ডিজিটাল মাল্টিমিটার কিভাবে ব্যবহার করে || মাল্টিমিটারের ডিসি ভোল্টেজ ||মাল্টিমিটার এর খুঁটিনাটি ||
মাল্টিমিটার কি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত..........................
ঘরে-বাইরে-দোকানে মাল্টিমিটার আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি ডিভাইস। বাসায় কোনো ইলেক্ট্রিশিয়ান আসলে আমরা তার সাথে একটি মাল্টিমিটার দেখতে পাই। আবার কোনো যন্ত্রে যখন ত্রুটি দেখা যায় তখন ত্রুটি সাড়াতে দোকানে নিয়ে গেলে ইলেক্ট্রিশিয়ান সবার আগে মাল্টিমিটার দিয়ে তা নিরীক্ষা করেন। কিন্তু কখনো কি এই সাধারণ ক্যালকুলেটরের মতো দেখতে ডিভাইস সম্পর্কে জানার আগ্রহ জন্মেছে? যদি জন্মে থাকে তবে আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছেন। আবার আপনি যদি ইলেকট্রনিক্স নিয়ে আগ্রহী হয়ে থাকেন অথবা এই বিষয়ে কাজ শিখতে চান তবে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই আপনার মাল্টিমিটার সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই, এই আর্টিকেলে আমরা মাল্টিমিটার সম্পর্কে যাবতীয় খুটিনাটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত পড়লে, মাল্টিমিটার কি এবং এর আনুষঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে আপনি একটি ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন।
মাল্টিমিটার কী এবং এটি কী ধরণের যন্ত্র?
মাল্টিমিটার হচ্ছে একটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যার মাধ্যমে একাধিক বৈদ্যুতিক সার্কিটের মধ্যকার ভোল্টেজ, ওহম পরিমাপ করা হয়ে থাকে। একটি ইলেক্ট্রিক সিস্টেমের দুইপাশে দুইটি লিড যুক্ত করে ইলেক্ট্রিশিয়ানগণ মাল্টিমিটারের সাহায্যে ভোল্টেজ, রোধ অথবা সিস্টেমে কারেন্টের পরিবর্তন যাচাই করতে পারেন। এটিকে অনেকসময় ভোল্ট-ওহম মিটার নামেও ডাকা হয়ে থাকে। ইলেক্ট্রিক সিস্টেমের ভোল্টেজে সূক্ষাতিসূক্ষ পরিবর্তনও এই মাল্টিমিটারে ধরা পরে যায়। কোনো হার্ডওয়্যারে যথেষ্ট পরিমাণে কারেন্ট পাস হচ্ছে কি না অথবা সিস্টেমে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না তা এই মাল্টিমিটারের মাধ্যমে জানা সম্ভব।
মাল্টিমিটার কত প্রকারের হয়ে থাকে?
মাল্টিমিটার সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে, ১। অ্যানালগ মাল্টিমিটার ২। ডিজিটাল মাল্টিমিটার। ফাংশনালিটির উপর নির্ভর করে অ্যানালগ এবং ডিজিটাল মাল্টিমিটারকে আবার অনেক ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
১। অ্যানালগ মাল্টিমিটার কী?
অ্যানালগ মাল্টিমিটার সাধারণত একটি সচল কয়েল মিটার এবং একটি পয়েন্টার দ্বারা গঠিত হয়ে থাকে। পয়েন্টারের সাহায্যে ডিসপ্লেতে মিটারের রিডিং দেখানো হয়। কয়েল মিটার সাধারণত দুইটি ফিক্সড ম্যাগনেটের মাঝে স্থাপন করা থাকে। কয়েল দিয়ে কারেন্ট পাস হওয়ার সময় ম্যাগনেট দুইটির ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সংস্পর্শে আসে এবং এই ক্রিয়ার মাধ্যমে যেই ইলেক্ট্রিক ফোর্স তৈরি হয় তা পয়েন্টারের মাধ্যমে ডিসপ্লেতে দেখা যায়, এটাকেই মিটারের রিডিং বলা হয়। পয়েন্টারের সাথে একটি স্প্রিং যুক্ত থাকে যা কারেন্টের প্রতিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ করে এবং কারেন্ট পাস হয়ে গেলে পয়েন্টারকে স্বাভাবিক স্থানে ফিরিয়ে আনে।
২। ডিজিটাল মাল্টিমিটার কী?
ডিজিটাল মাল্টিমিটার হচ্ছে মাল্টিমিটারের মডার্ন এবং অধিক নির্ভরযোগ্য সংস্করণ। এইক্ষেত্রে মাল্টিমিটারে পাওয়া অ্যানালগ সিগনালকে ডিজিটাল সিগনালে রুপান্তর করে তা ডিজিটাল ডিসপ্লে’র মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। ডিজিটাল মাল্টিমিটারে অ্যাকুরেট ডেটা পাওয়া যায় এবং এছাড়াও অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য এটার সাথে সংযুক্ত থাকে, যা অ্যানালগ মাল্টিমিটারে পাওয়া যায় না। অ্যানালগ মাল্টিমিটারের তুলনায় ডিজিটাল মাল্টিমিটার সাইজের বিচারে কিছুটা ছোট হয় এবং একটি এলসিডি প্যানেলের সাহায্যে ওহম, ভোল্টেজ এবং আরো ইউনিটের নিউমেরিক অ্যামাউন্ট জানা যায়। তবে অতিরিক্ত কিছু ইলেক্ট্রনিক কমপোনেন্ট এবং লজিকের ব্যবহার হওয়ায় এর গঠন অ্যানালগ মাল্টিমিটারের তুলনায় কিছুটা জটিল।
মাল্টিমিটারের ৩টি মেইন ফাংশন কি কি?
বর্তমান সময়ের ডিজিটাল মাল্টিমিটারে আরো অনেক ফাংশন থাকলেও, একটি মাল্টিমিটারের মূলত ৩টি মেইন ফাংশন থাকে।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভোল্টেজের পরিমাপ।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারেন্টের পরিমাপ।
রেজিস্ট্যান্স, ক্যাপাসিট্যান্স এবং ইন্ডাক্টেনস-এর পরিমাপ।
মাল্টিমিটার কোথায় কোথায় ব্যবহার হয়?
বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাল্টিমিটারের ব্যবহার সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো -
অটোমোটিভ ইন্সপেকশন:
মাল্টিমিটারের একটি প্রধান ব্যবহার হচ্ছে অটোমোটিভ ইন্সপেকশন। মাল্টিমিটারের সাহায্যে আপনি কোনো ব্যাটারির চার্জের পরিমাণ জানা, কভারের লিক টেস্ট করা, অল্টারনেটর টেস্ট করা, গাড়ির হর্ন টেস্ট করাসহ অন্য যেকোনো ইলেক্ট্রিকাল সার্কিট পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। মাল্টিমিটারের কিছু পাওয়ারফুল ইউনিট রয়েছে যেগুলো দ্বারা ফুয়েল ইঞ্জেকটর টেস্ট এবং সিগনাল ট্র্যাকিং করা যায়। অটোমোটিভ টেকনিশিয়ানদের জন্য এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় ডিভাইস।
বাসার খুটিনাটি কাজ: প্রতিটি ঘরেই অত্যন্ত একটি মাল্টিমিটার থাকা প্রয়োজন। ত্রুটিপূর্ণ সকেট পরীক্ষা করা, কন্টিনিউইটি চেক, ছোটখাটো যন্ত্রপাতির কারেন্ট পরীক্ষা, বাসার অন্যান্য সার্কিট পরীক্ষা করে দেখার কাজে এই মাল্টিমিটার অত্যন্ত উপকারী একটি ডিভাইস। বাড়ির ভেতরের ব্যবহারের জন্য স্পেসিফিকালি কোনো মাল্টিমিটার নেই, তবে যেকোনো সাধারণ মাল্টিমিটার দ্বারাই এই কাজ সম্পন্ন করে ফেলা সম্ভব।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যবহার: অগণ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজে মাল্টিমিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিভিন্ন কাজে মাল্টিমিটার অনেক বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয় - কোনো যন্ত্রের তাপমাত্রা পরিমাপ করা, কন্টিনিউইটি চেক, কারেন্টের প্রবাহ সম্পর্কে জানা অথবা সার্কিটের ত্রুটি নির্ণয়সহ মাল্টিমিটারের আরো অনেক ব্যবহার রয়েছে। কিছু মডার্ন মাল্টিমিটারের সাহায্যে তার ছাড়াই একস্থান থেকে অন্যস্থানে ডেটা পাঠানো যায়।
ব্যক্তিগত এক্সপেরিমেন্ট: ছোটখাটো এক্সপেরিমেন্ট অথবা যাচাই-বাছাই করার কাজে মাল্টিমিটারের জুড়ি নেই। যেহেতু ব্যক্তিগত গবেষণায় অনেক বেশি পরিমাণে খরচ করা সম্ভব হয় না, আর মাল্টিমিটারের দামও খুব বেশি নয়, তাই ব্যক্তিগত গবেষণায় এটি খুব কাজে দেয়।
Негізгі бет Ғылым және технология ডিজিটাল মাল্টিমিটার কিভাবে ব্যবহার করে || মাল্টিমিটারের ডিসি ভোল্টেজ ||মাল্টিমিটার এর খুঁটিনাটি ||
Пікірлер: 4