আবৃত্তি
ভালোবাসতে বলুন স্যার
কবি: অরুপ চৌধুরী
কন্ঠ: বসন্ত কুমার পাল
শব্দ মিশ্রণ: প্রদীপ ঘোষ (প্রপার টেক)
ভিডিও এডিটিং: নিশান চৌধুরী ও ফাহমিদ চৌধুরী
পরিকল্পনা, প্রয়োগ ও প্রকাশনা:
কামরুজ্জামান চৌধুরী
KAMRUZZAMAN CHOWDHURI ( JEWEL)
বিশেষ ধন্যবাদ: ডঃ আবুল হাসান ও কালিশঙ্কর বিশ্বাস।
ভালােবাসতে বলুন, স্যার
কবি: অরূপ চৌধুরী।
আমায় ডেকেছেন স্যার?
বাবা এসেছিল? মা ও?
ও বুঝেছি স্যার, ওরা কমপ্লেন করেছে;
পড়াশুনা করি না, তাই তাে? তর্ক করি, জিনিস ভাঙি,
মোবাইল চাই বলে জেদ ধরেছি,
টিভি দেখতে চাই, তাই না স্যার? সব সত্যি স্যার -
দিন, শাস্তি দিন ওদের কথা শুনে।
কী বললেন স্যার, শাস্তি দেবেন না।
আপনি ওদের দলে নন!
আমার কথা শুনতে চান!
বলুন কী শুনতে চান?
ভালোবাসে! বাবা! মা!
কেউ নয় স্যার।
ওরা ভালােবাসে পরীক্ষার নাইনটি পারসেন্ট
আমাকে নয়।
শুধু পড়া চাই ওদের - রাত দিন।
ভালােবাসা নেই স্যার, ওদের আছে ভাল আশা;
ওদের ভালােবাসা নম্বরের টার্ম ডিপোজিট। ওরা মানুষ গড়তে চায় না, চায় মেশিন।
নম্বর তােলার জ্যান্ত মেশিন। জানেন স্যার - ওরা আমাকে ফুল আঁকতে দেয় না,
গুপি বাঘা গাইতে দেয় না।
স্টাডি টেবিলে ল্যাম্পের তলায় বই দেখায়;
পথের পাঁচালী পড়তে গেলে প্রাইভেট টিউটরের সময় বলে।
জানেন স্যার, নাইনে পড়ি, ছটা টিউটর। আমাকে নিজেকে পড়তেই দেয় না ওরা।
সর্বক্ষণ বকুনি, তুলনা, পিটুনি
শুতে - বসতে খেতে ইচ্ছা করে পৃথিবী ছেড়েই চলে যেতে; সত্যি বলছি স্যার, মেশিন হতে চাই না।
পালাতে ইচ্ছা করে স্যার,
জানেন স্যার
আজও খেতে পারিনি,
খেতে বসে মায়ের বকুনি, রাগ হল, ভীষণ রাগ, টেপরেকোর্ডারটা ভেঙেই দিলাম রাগে,
ভাতের থালা ফেলে বই কাঁধে স্কুলে চলে এলাম। ভালােবাসাহীন চাল সেদ্ধর চেয়ে উপােস ভাল, স্যার
এই দেখুন, পেটে তীব্র খিদে - কিন্তু কোন কষ্ট নেই, বন্ধুরা আছে এখানে, আপনারা আছেন,
কত আপন করে ভালােবাসা আছে এখানে। এ কী স্যার! আপনি কাঁদছেন!
কী বললেন! বসবাে? আপনার পাশে? বেশ বসলাম। এ কী, টিফিন বক্স খুলছেন কেন স্যার?
, না, স্যার আপনার টিফিন
স্যার! আমি না খেলে আপনি আরও কাঁদবেন! খাচ্ছি স্যার, আমি নিজের হাতেই ....
! আপনি খাইয়ে দেবেন। তাই দিন স্যার। কতদিন এমনি করে কেউ খাইয়ে দেয়নি
এমনি করে আদর করে, কাছে টেনে ; এমনি করে বাবা, মা, যদি .....।
স্যার আমিতো পড়তেই চাই নিজের মতাে করে,
ওরা চায় ওদের মতাে, ওদের কাছে জীবন মানে জয়েন্টএন্ট্রান্স,
বিলাে নাইনটি মানে কুলাঙ্গার।
ওরা ঘােড়াকে চাবুক মারতে জানে গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করতে জানে না!
আচ্ছা বলুন তো স্যার। টব সুন্দর থাকলেই কি ফুল ফোটে
যদি না মাটি থাকে?
সার দিলেই কি গাছ বড় হয় -
যদি না জল পায়?
ওরা সব চোর স্যার আমার হাসি, আমার বন্ধু, খেলা, বয়স, ইচ্ছা, এই আকাশ, পাখি, গাছ, ফুল, রােদ, চাঁদ, তারা, সব আমার চুরি হয়ে গেছে স্যার। যদি ওদের গলা ধরে একটু আদর পেতে চাই, ওরা বলে - বইকে জড়িয়ে ধরতে; ওরা বলে টিউশন যেতে; জ্বর গায়ে যদি একটু বিশ্রাম নিতে চাই পাশ ফিরিয়ে ওরা শােনায় পরীক্ষার রুটিন। তখন রেগে প্রতিবাদ করি ওরা প্ল্যান করে সাইক্রিয়াটিক দেখাবে, আসলে শতাব্দীর নতুন রোগী ওরা।
স্বপ্ন চুরি করে, সময় চুরি করে,
যদি ওদের হাত ধরে সবুজ মাঠে যেতে চাই,
এ কী স্যার! টিফিন তাে সব শেষ!
আপনি কী খাবেন?
আপনার খিদে নেই। - আমাকে খাইয়ে আপনার খিদে মিটলো!
এই কথা দিলাম স্যার,
আর কিছু ভাঙবাে না, মােবাইল চাইব না
বকুনি খাবাে, মার খাবাে, তবু কিছু বলবাে না শুধু ওদেরকে বলুন একটু ভালােবাসতে।
নম্বরকে নয় আমাকে।
আমি মানুষ হতে চাই স্যার,
একটা বড় মানুষ।
Негізгі бет শিক্ষক দিবসের নতুন কবিতা (ভালোবাসতে বলুন স্যার)।। কন্ঠ: বসন্ত কুমার পাল
Пікірлер: 427