কার্প নয় দেশীয় ট্যাংরা মাছ চাষে অধিক লাভ (Tangra Fish Culture is More Profitable Than Carp Culture)
ইউটিউবে হাজারো ভূল তথ্য প্রচারণার মধ্যে সঠিক তথ্য প্রচারে অঙ্গিকারা বদ্ধ
#দেশি_ট্যাংরা_মাছ #ট্যাংরা_মাছ_চাষ_পদ্ধতি #ট্যাংরা_মাছ
My facebook Page Link : / tofazahamed64
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩য় এবং বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম। আমাদের দৈনিক মাথাপিছু ৬০ গ্রাম মাছের চাহিদার বিপরীতে মাছ গ্রহণের পরিমাণ ৬২.৫৮ গ্রাম। আবহমানকাল হতে এদেশে মিঠা পানির জলাশয়ে বিশেষ করে পুকুর, নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদিতে যে মাছগুলো পাওয়া যায় তার মধ্যে ট্যাংরা (Mystus Vitatus) মাছ বাঙ্গালীর খুব প্রিয় এবং সুস্বাদু মাছ হিসাবে সমধিক প্রসিদ্ধ। বর্তমানে বাজারে সরবরাহ কম এবং চাহিদা বেশী হওয়ার কারণে এ মাছের বাজারমূল্য রুই জাতীয় মাছের তুলনায় অনেক বেশী। এই মাছে কাঁটা কম বিধায় সকলের নিকট প্রিয়। কিন্তু শস্যক্ষেতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, জলাশয় শুকিয়ে মাছ ধরা, বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ্য নি:সরণ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে বাসস্থান ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ায় এ মাছের প্রাচুর্যতা ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। তাই লাগসই প্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে চাহিদা সম্পন্ন ও উচ্চমূল্যের এ সুস্বাদু মাছটির উৎপাদন বৃদ্ধি করে বাজারে প্রাচুর্যতা নিশ্চিত করা যায়। দেশের কিছু কিছু এলাকায় এ মাছের চাষ শুরু হলেও অনেক চাষিগণ এ মাছচাষ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থেকে এখানও বঞ্চিত আছেন।
ট্যাংরা মাছের পুষ্টিমাণ
ট্যাংরা মাছের পুষ্টিমান অন্যান্য মাছের তুলনায় অধিক, এমাছে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছে আছে আমিষের পরিমাণ ১৯.২ গ্রাম, স্নেহ ৬.৫ গ্রাম, লোহা ০.৩০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.২৭ গ্রাম, ফসফরাস ০.১৭ গ্রাম ও পানি ৭২.৬০ গ্রাম।
ট্যাংরা মাছের বৈশিষ্ট্য
• ট্যাংরা মাছের দেহ আঁইশবিহীন চকচকে;
• ট্যাংরা মাছ ছোট মাঝারি-বড় বাৎসরিক/ষান্মাষিক/মৌসুমী ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের পুকুরেই চাষ করা যায়;
• ট্যাংরা মাছ একক চাষের পাশাপাশি পাবদা ও কার্প জাতীয় মাছের সাথেও মিশ্র c×wZ‡Z চাষ করা যায়;
• এটা ক্যাটফিশ জাতীয় মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু;
• চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশী থাকায় এই মাছচাষে বেশী আয় করা সম্ভব;
• অধিক ঘণত্বে চাষ করার ক্ষেত্রে এ্যারেটর/প্যাডেল হুইলের ব্যবস্থা রাখলে ভাল উৎপাদন পাওয়া যায়;
• জীবন্ত অবস্থায় বাজারজাত করা যায় ফলে অধিক মুল্য পাওয়া যায়।
ট্যাংরা মাছের খাদ্য ও খাদ্যাভ্যাস
টাংরা মাছ প্রাকৃতিক খাবার যেমন কাইরোনমিড লার্ভা, টিউবিফেক্স ওয়ার্ম, কুচো চিংড়ি, কেঁচো, জলজ পোকা-মাকড়, শ্যাওলা ও পাতার নরম অংশ খেয়ে বড় হয়; সাধারণভাবে ট্যাংরা মাছ সর্বভূক, বটম ফিডার এবং সম্পূরক খাদ্য হিসাবে সরিষার খৈল, চালের কুড়া, ফিসমিল দিয়ে তৈরি খবার খায়। এ ছাড়াও ট্যাংরা মাছ কারখানায় তৈরি ফরমুলেটেড ব্যালান্স ভাসমান খাবার খেয়েও দ্রুত বড় হয়। ট্যাংরা মাছ নিশাচর তাই রাতে খাদ্য গ্রহণে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
মজুদপূর্ব ব্যবস্থাপনা
• ট্যাংরা মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে;
• প্রথমে পুকুর শুকিয়ে, তলদেশের কাদা, জৈব অবশেষ অপসারণ করতে হবে;
• পুকুর শুকিয়ে প্রস্তুত করলে মাছচাষকালীন অনেক সমস্যা মুক্ত থাকা যায়;
• পুকুরের পাড় পরিস্কার, মেরামত ও সংস্কার করতে হবে, পুকুরের তলা মই দিয়ে সমান করে দেওয়া ভাল;
• পুকুরের পানি ঢুকানো ও বের করে দেওয়ার জন্য ইনলেট ও আউটলেট থাকা উত্তম;
• পুকুরের চার পাশে নাইলন নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে যাতে রাক্ষুসে প্রাণী ঢুকতে পারে;
• কোন কারণে পুকুর শুকানো সম্ভব না হলে রোটেনন প্রয়োগ করে রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূর করতে হবে;
• এ ক্ষেত্রে রোটেননের মাত্রা ৯.১% শক্তিমাত্রার রোটেনন ২৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট পানিতে অথবা ৭% শক্তিমাত্রার রোটেনন ৩৫ গ্রাম/শতাংশ/ফুট পানিতে প্রয়োগ করতে হয়। এর বিষক্রিয়ার মেয়াদ: ৫-৭ দিন বিদ্যমান থাকে। পুকুরে রোটেনন প্রয়োগের পরিমাণ খুবই সতর্কতার সাথে নির্ণয় করতে হবে যাতে সকল ধরনের রাক্ষুসে মাছ মারা যায় ;
• যেসব পুকুরে খরতা (Hardness) ২০-৪০ mg/L pH দ্রুত উঠা নামা করে এবং প্রাকৃতিক খাদ্য সহজে উৎপাদন হয় না। এ খরনের পুকুরে প্রতি শতাংশে ১-১.৫ কেজি জিপসাম/ডলোচুন প্রয়োগ করে ক্ষরতার মান বৃদ্ধিকরে নিতে হবে;
• ট্যাংরা মাছের পুকুর প্রস্তুতিতে সার ব্যবহার করার প্রয়োজন নাই;
• পুকুর প্রস্তুতের সময় শতকে ১-১.৫ কেজি চুন প্রয়োগের পাশাপাশি শতকে ১০০ গ্রাম হারে ব্লিচিং পাওডার (৩০% ক্লোরিন যুক্ত) ব্যবহার করতে হবে। চুন পুকুরের তলদেশের কাদার সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে;
• পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তথা জুপ্লাংক্টন তৈরির জন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় উপাদান মাত্রা
অটোকুড়া/মিহিকুড়া ২০০ গ্রাম/শতাংশ একত্রে ৩ গুণ পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে রস পুকুরের পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
চিটা গুড় ২০০ গ্রাম/শতাংশ
ইস্ট ৫-১০ গ্রাম/শতাংশ
অটোকুড়ার পরিবর্তে
৩৫-৪০% প্রোটিন সমৃদ্ধ নার্সারি-১ ফিড (পাউডার) ৩০০ গ্রাম/শতাংশ একত্রে ৩ গুন পানিতে ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ছেঁকে রস পুকুরের পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
সুস্থ্য সবল ট্যাংরা মাছের পোনার বৈশিষ্ট্য
• গাত্রবর্ণ উজ্ব্বল ও চকচকে, পিঠের দিকে কালচে বর্ণের হয়
• স্রোতের বিপরীতে ঝাঁক বেঁধে দ্রুত চলাচলে সক্ষম
• পোনার গা পিচ্ছিল এবং গায়ে কোন প্রকার ক্ষতচিহ্ন থাকবে না
পোনা টেকসইকরণ
পরিচিত স্বনামধন্য বিশ্বস্ত হ্যাচারি থেকে খোজ খবর নিয়ে ভালমানের পোনা সংগ্রহ করতে হবে। ট্যাংরা মাছের পোনা মজুদের উদ্দেশ্যে পরিবহণের পূর্বেই টেকসই করে নিতে হয়। সরবরাহের উদ্দেশ্যে পোনা ধরার আগের শেষরাত থেকে খাদ্য প্রদান বন্ধ রাখা দরকার। আহরণকৃত পোনাগুলো ট্যাংক বা সিস্টার্ণে ৮-১২ ঘন্টা ঝরণা ধারায় রেখে টেকসই করে নিতে হবে।
পোনা পরিবহণ
• ট্যাংরা মাছের পোনা ড্রামে পরিবহণ করা যায়।
•
Негізгі бет Ғылым және технология কার্প নয় দেশীয় ট্যাংরা মাছ চাষে অধিক লাভ (Tangra Fish Culture is More Profitable Than Carp Culture)
Пікірлер: 195