'আমৃত্যু ছদ্মবেশ🌿'
একটি মেয়ে ছিলো
রিনিঝিনি শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণার মতো চঞ্চল
প্রখর বুদ্ধিমত্তা ছিলো তার, সহজে কিছু ভুলতো না
জটিল জটিল সব অঙ্কের সমাধান করে ফেলতো
অনায়েসেই
স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে একদিন সে কলেজে উঠলো
বিজ্ঞান বিভাগটিই পছন্দ করে নিয়েছিলো
ভীষণ দুঃসাহস ছিলো তার
জীববিজ্ঞানের ব্যাঙ, কেঁচো, তেলাপোকাদেরকে
চিটপটাঙ করে ট্রের উপর তাদের ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়ে
ক্লাসের সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতো।
ওদিকে পাড়ার একটি মারকুটে ছেলে মনেমনে
মেয়েটিকে ভীষণ পছন্দ করতো।
এক মুহুর্তও সে চোখের আড়াল করতে চাইতো
না মেয়েটিকে
তার এই পছন্দের কথাটি বন্ধু মহলের
সবাই জানতো
তাই তারা ডেরা বেধেছিল মেয়েটির দোতলা
বাসার নীচে
সারাদিন সেখানে বেঞ্চির ওপর বসে আড্ডা
আর হৈচৈ করে কাটতো তাদের সময়।
পথে আসতে যেতে দূর থেকে মেয়েটির সাথে
তার চোখাচোখি হতো
মেয়েটি মাঝেমধ্যে বারান্দাতেও আসতো বৈকি
তখন বন্ধুরা ফিসফিয়ে উঠতো-"ওই দ্যাখ!
ওই দ্যাখ, তোর নায়িকা বারান্দায়"
ছেলেটি আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নিতো
মেয়েটিকে কিন্তু মুখে কথা বলে হয়ে ওঠেনি
কোনদিন,
প্রবল পছন্দের কথাটি তাই মনের মাঝেই
থেকে গিয়েছিল ছেলেটির।
একদিন প্রচন্ড বৃষ্টি
মেয়েটি রিক্সা পাচ্ছেনা কোথাও,
ছেলেটি বৃষ্টি মাথায় করে একটি রিক্সা ডেকে
দেয় তার জন্য,
মেয়েটি ধন্যবাদ জানিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
"পড়ালেখা কিছু করেন?"
ছেলেটি মাথা নীচু করে জবাব দিলো,
"জ্বি, ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষ"
আসলে সমবয়সী তারা, একই বর্ষে,
একই কলেজে পড়ে।
ছেলেটি বলল, "আপনাকে কলেজ ক্যাম্পাসে
দেখেছি। বিজ্ঞানের ছাত্রী আপনি"
মেয়েটি বলল, "আপনার আমাকে এই দেখাটিও
বেশ কিছু মাস ধরেই দেখছি আমিও। তা আমার
জন্য নিজেকে বদলাতে পারবেন?
পারলে, জানাবেন কিন্তু"
তারপর হাসি মুখে রিক্সাতে চড়ে বসলো মেয়েটি,
এরপর থেকে তাদের কথার ট্রেন আর থামেনি
কখনো।
ছেলেটিও বদলে নিয়েছে নিজেকে পুরোপুরি,
তার বন্ধুরাও এখন তার সাথ ধরে নিয়মিত
কলেজ যায় ও ক্লাশ করে।
ভার্সিটি পার করে ওরা বিয়ে করলো
বিয়ের পর থেকেই মেয়েটি কেমন যেন বদলে
গেলো।
টিকটিকি দেখলে ভয়ে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে,
আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে দৌড়ে এসে ছেলেটির
বুকে মুখ গুঁজে,
একশো বার একই পথ দিয়ে গেলেও সে আনমনা
থাকে, চিনতে পারেনা রাস্তাঘাট,
তাই ছেলেটিকেই সবখানে তাকে নিয়ে যেতে হয়।
চিকিৎসায় ইঞ্জেকশন নিতে গেলেও ভয়ে
ছেলেটির হাত খামচে ধরে থাকে,
ছেলেটি হয়তো রাতজেগে ল্যাপটপে অফিসের
কাজ করছে, কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই একা ঘুমাবেনা,
তার নাকি ভয় লাগে!
খালি মনেহয় জানালা দিয়ে কেউ হাত বাড়িয়ে
তার চুল স্পর্শ করবে।
অতএব, ছেলেটিকে তার সাথে শুতেই হবে এবং
মেয়েটিকে ঘুম পাড়িয়ে তবেই নিজে ঘুমোতে
পারবে।
ওরা ঝগড়াও করতো, কিন্তু মেয়েটির একই কথা
"ছয় ঘন্টার বেশী হয়ে গেছে, এখনো তুমি হপ হয়ে
বসে কেন? হাসো হাসো। দাঁড়াও, প্রয়োজন পড়লে
কাতুকুতু দিয়ে হলেও হাসাবো তোমাকে।"
এভাবেই একে অপরকে দেখতে দেখেতে দুজনের
দুজোড়া চোখ দূর্বল হয়ে গেলো।
বার্ধক্যে পৌঁছালো তারা।
তারা আর ছেলে ও মেয়ে নেই, এখন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা।
সেই বৃদ্ধাটি এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে,
দানাপানি বন্ধ করেছে বেশ আগেই,
কুঁচকে যাওয়া হাতের চামড়ার নীচ দিয়ে বাটারফ্লাই
নিডলের মাধ্যমে বয়ে চলেছে স্যালাইন।
স্থানটি জ্বালাপোড়া করতে পারে ভেবে সেখানে
কাঁপাকাঁপা হাতে ধীরে হাত বুলাচ্ছে বৃদ্ধটি।
বৃদ্ধাটি শুকনো ঠোট কেঁপে উঠলো,
বলল- "শোন, অনেক হয়েছে, এবার তুমি
বাসায় যাও, বিশ্রাম করো।
ভেবোনা আমি ভয় পাবো বা ভীতু।
আমি কখনই কিছুকে ভয় পাই নাই।
আমি শুধুই তোমাকে ছোঁয়ার ছুঁতো খুঁজতাম,
আমি কখনই তোমাকে ছেড়ে একটি রাতও
থাকতে পারতাম না, তুমি পাশে না থাকলে,
তোমার গায়ের সুগন্ধ না পেলে আমার ঘুমই
আসতো না।
আমি কোন জায়গাতে একবার গেলেই মনে
রাখতে পারতাম আজীবন,
কিন্তু গাড়ির পেছন সিটে বসে তোমার হাত
জড়িয়ে ধরে থাকার লোভ সামলাতে পারতাম
না কখনো।
তাই তোমাকে ছাড়া আমি এক পাও বাড়ির বাইরে
যাইনি কোনদিন।
ও হ্যাঁ আরেকটি কথা, তুমি যে ইন্টারমিডিয়েটে
একাউন্টিং এ ভর্তি হয়েছিলে, সেটা আমি জানতাম।
কিন্তু আমি তোমাকে আমার ক্লাশে, আমার পাশে
চেয়েছিলাম প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্ত।
আমি আসলে ভীতু নই, কিন্তু তোমার সাথে আরো
কয়েকটি জীবন আমি এরকম ভীতু সেজেই পার
করে দিতে পারি।"
কথাগুলি বলা শেষ হলে বৃদ্ধার ভেতর থেকে
একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো এবং ধীরে ধীরে
চোখের পাতা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো।
বৃদ্ধটি তার পাশে বসে বসে মন লাগিয়ে
বৃদ্ধার কথাগুলি শুনছিল আর তার
দুচোখ গড়িয়ে পানি ঝরছিল অঝোর ধারায়,
এরই মাঝে কখন যেন রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর
করলো তার দুচোখের পাতায়, বৃদ্ধার হাতটি
মুঠোর মাঝে নিয়ে হাতের পাশে মাথা রেখে
সে ঘুমিয়ে পড়লো।
হাজার ডাকাডাকি করেও যেই ঘুম আর
ভাঙাতে পারলোনা কেউই।।
_______ফূয়াদ স্বনম🌿
#poems #recitation #videos #youtube #আবহ #আবৃত্তি #videosvirales #viralvideo #কবিতা #ভালোবাসা #বাংলা #বাঙালী
Негізгі бет আমৃত্যু ছদ্মবেশ, ফুয়াদ স্বনম, আবৃত্তি :Ishita Das Adhikary ঈশিতা দাস অধিকারী
Пікірлер: 2