গত শতাব্দীর শুরুর দিকের কথা। আত্মিক ও চিন্তাগত সংকটে ভুগতে থাকা ইউরোপের অন্য অনেক যুবকের মতো ইহুদি লিওপোল্ড ওয়েইসও খুঁজছিলেন মুক্তির পথ। সাংবাদিকতার সুবাদে তিনি চষে বেড়ান মুসলিম বিশ্ব। পরিচিত হন ইসলামের অনন্য সভ্যতা ও উন্নত চরিত্রের সাথে। এক সময় তীব্র আকর্ষণবোধ থেকে ১৯২৬ এ ফিরে আসেন আপন নীড়ে, পৃথিবীর নীড় ইসলামে। আজকের এই ভিডিওতে তিনি বর্ণনা করবেন তার এই ফিরে আসার দাস্তান।
মুহাম্মদ আসাদ, ইসলাম ও ইউরোপের মধ্যকার ব্রীজ। যে ব্রীজ ইউরোপের হাহাকার হৃদয়কে ইসলামের প্রাণশক্তি দেখিয়েছে। উম্মাহর জন্য রেখে গেছেন, Islam at The Crossroad ও Road To Makkah এর মতো অমূল্য গ্রন্থ।
--
আমি ছিলাম পূর্ব আফগানিস্তানের হেরাতে। শরৎের শেষদিকে হিন্দুকোষ পাহাড় হয়ে কাবুল যাচ্ছিলাম।ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিশ পঁচিশদিন সময় লেগে যেত। বেশ কষ্টসাধ্য ভ্রমণ। একসময় গিয়ে আমার ঘোড়াটির খুরের নাল হারিয়ে গেলো। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে রাস্তা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের পথ ধরলাম। সেখানেই কামারের মাধ্যমে নতুন নাল পালটে নিলাম। ইতোমধ্যে সেখানকার গোত্রপতি নতুন আগন্তুকের আগমন সংবাদ শুনতে পেয়ে আমাকে সন্ধ্যা ও রাত তার ঘরে কাটানোর আমন্ত্রণ জানালেন। বেশ মিশুক ব্যক্তি ছিলেন। ইরান ও আফগানিস্তানে দুই বছর কাটানোর সুবাদে সে সময় আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে ফারসি বলতে পারতাম। এ কারণে আলোচনা বেশ সহজ হয়েছিলো। রাতের খাবার খেয়ে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আড্ডা দিলাম। স্বাভাবিকভাবেই প্রসঙ্গ এলো ইসলামের। আমি স্পষ্টতার সাথে তাকে বললাম: তোমরা মুসলিমেরা বেশ অদ্ভুত। তোমাদের কুরআনে সর্বোৎকৃষ্ট চারিত্রিক নির্দেশনা রয়েছে। সর্বোত্তম আদর্শ মোহাম্মদ ﷺ তোমাদের নবী। কুরআন ও নবীর নির্দেশিত পথ তোমরা কিভাবে ছেড়ে দিলে? এমন চূড়ান্ত পতন তোমাদের কিভাবে ঘটলো? কেন তোমরা কুরআনের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত পথে চলতে শুরু করলে? এভাবেই আমরা আলোচনা করছিলাম।
একসময় সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, তুমি মুসলিম!
আমি এক প্রকার হতভম্ব হয়ে বললাম: আমি কখনো মুসলিম ছিলাম না। এখনো নই।
সে বললো: না, তুমি একজন মুসলিম। কিন্তু এটা তুমি নিজেই জানোনা। একদিন জানবে।
আর এটি ছিল একটি ভবিষ্যদ্বাণী। সে যাত্রা থেকে ফিরে আসার কয়েকমাস পর আমি সত্যই মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম।
আমাদের কি একটু জানাবেন, মুসলিম হওয়ার পথে কার্যত কোন বিষয়টি আপনার ভেতর পরিবর্তন এনেছিল?
মুসলিমবিশ্বে আমার দ্বিতীয় দীর্ঘ সফর থেকে ফিরে এসে আমি তখন বার্লিনে বসবাস করছিলাম। আমি কুরআনের অনুবাদ পড়তে শুরু করি। একদিন আমার জার্মান প্রথম স্ত্রীর সাথে কুরআন সম্পর্কে আমি আলোচনা করছিলাম। আমার চেয়ে সে বয়সে বড়। সেও আমার মতই ইসলামে আগ্রহী।
১৯২৬ সালের কোন একদিন আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেইনে করে আমরা যাচ্ছিলাম। লাগাতার কয়েক বছর মূল্যস্ফীতি ও দুঃখদুর্দশার পর সে বছরটি ছিল মধ্য ইউরোপের সমৃদ্ধির বছর। পাতাল ট্রেইনে আমাদের আশপাশের সবাই ছিল উন্নত পোষাক পরিহিত ও স্বাস্থবান। কিন্তু সবাইকে আমার অসুখী মনে হচ্ছিলো, একে একে সকলকে ভালো করে লক্ষ করার পর নিশ্চিত হলাম যে, কোন এক দুঃখ তাদের উপর ভর করে আছে। প্রত্যেকেই জর্জরিত। আমি আমার স্ত্রীর দিকে তাকালাম। সে ছিলো অংকনশিল্পী, মুখ দেখেই অনেক কিছু বুঝতে সক্ষম। আমি বললাম তাদের মুখ দেখে তোমার কি মনে হই? সে জবাব দিলো: তারা অসুখী। একই মন্তব্য তারও। ঘরে ফিরে এসে এই অবস্থার কোন ব্যাখ্যা আমি খুঁজে পাচ্ছিলামনা। কারণ যেভাবে বললাম বছরটি ছিলো মধ্য ইউরোপের সমৃদ্ধির বছর। হঠাৎ আমার লাইব্রেরীতে কুরআনের জার্মান অনুবাদ কপি আমি খোলা দেখতে পেলাম, যেটা বের হওয়ার সময় রেখে এসেছিলাম। আমি সেটি নিলাম, প্রথম যে সুরাটি চোখে পড়লো সেটি ছিলো সুরা তাকাসুর। আমি এখন ইংরেজীতে অনুবাদ করে বলছি।
اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ۙ حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ ثُمَّ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ؕ کَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُوۡنَ عِلۡمَ الۡیَقِیۡنِ ؕ لتَرَوُنَّ الۡجَحِیۡمَ ۙ ثُمَّ لَتَرَوُنَّہَا عَیۡنَ الۡیَقِیۡنِ ۙ ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ
প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপনীত হও। খবরদার তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। অত:পর অবশ্যই তোমরা দ্রুত জানতে পারবে। এমন করতেনা; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে। অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখবে; তারপর অবশ্যই তোমরা তা নিজ চোখে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
হঠাৎ আমার মনে হলো, এই আয়াত আমাদের বর্তমান আধুনিক জীবনব্যবস্থাকেই চিত্রিত করছে। লোকেরা সব অতৃপ্ত। তারা বস্তুবাদী পণ্যদ্রব্য একেরপর এক চাইতেই আছে। সবাই তারা অসুখী, তারা যে জাহান্নামে অবস্থান করছে সেটা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেনা। আল্লাহ এই আয়াতে বলেন:
ثُمَّ لَتَرَوُنَّہَا عَیۡنَ الۡیَقِیۡنِ ۙ ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ
তারপর অবশ্যই তোমরা তা নিজ চোখে দেখতে পাবে, এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
কিছুক্ষণ আগে দেখে আসা পাতাল ট্রেইনের দৃশ্যটিকে এই সুরা এভাবে চিত্রিত করছে দেখতে পেয়ে আমি যারপরনাই হতভম্ব হয়ে পড়লাম। আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, ১৪০০ বছর আগের এক ব্যক্তি কিভাবে এমন বই লিখতে পারে, যা আজকের অবস্থাকে চিত্রিত করবে?! আজকের মানুষের অনুভূতিকে কিভাবে তুলে ধরতে পারে?! কোন মানুষ কিংবা কোন বিস্ময়কর প্রতিভার অধীকারী কারও পক্ষে তো এমন কিছু করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে তিনি ছিলেন এক আরবী, যার কিনা বহির্বিশ্ব সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিলনা। না। এই গ্রন্থ অবশ্যই প্রেরিত। কার পক্ষ থেকে প্রেরিত? আমি নিশ্চিত বিশ্বাস করে নিলাম, এটি একটি ঐশী গ্রন্থ।
Негізгі бет মুহাম্মদ আসাদ যেভাবে মুসলিম হলেন। Muhammad Asad Interview With Bangla Subtitle।
Пікірлер: 129