আমেরিকার ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা।
বিশ্বে আমেরিকা ও তার মিত্রদের নব্য ঔপনিবেশিক কৌশল হলো `গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা’। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য বিশ্ব রাজনীতির কৌশল, ঔপনিবেশিক মানসিকতা ও খনিজ সম্পদ দখল। তারা বিভিন্ন দেশে তার স্বার্থ বিরোধী সরকারকে অগণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে আখ্যা দেয় এবং বিরোধীদের দমন করছে অভিযোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।
বর্তমানে রাজনৈতিক সংকটে পাকিস্তান। তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় ইমরানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ইসলামাবাদের আদালত। সাজা ঘোষণার পরই ইমরানকে গ্রেপ্তার ও পাঞ্জাবের অ্যাটক কারাগারে পাঠানো হয়। খানের বিরুদ্ধে বর্তমানে শতাধিক আইনি মামলা আছে। গতবছর নভেম্বরে খানকে গুলি করা হয়েছিল। খান বলে আসছেন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়টি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, বর্তমান সরকার এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি চক্রান্ত। কারণ তার পররাষ্ট্র নীতিতে পশ্চিমা বিরোধিতা আছে। খান বলেন, আমেরিকা সবসময় পাকিস্তানকে কৌশলগত লক্ষ্য পূরণের জন্য ব্যবহার, উদ্দেশ্য পূরণ হলে পরিত্যাগ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। খান রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি পুতিনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব করার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলেন। খান তেহরানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন। খান বলেন বিদেশি শক্তিগুলো তাকে পছন্দ করেনি, কারণ "কারো কাছ থেকে হুকুম না নেওয়া" তার মনোভাব।
মরুভূমির মাঝখানে নাইজার একটি ল্যান্ডলকড দেশ। নাইজারের রয়েছে ইউরেনিয়াম, কয়লা, স্বর্ণ, লোহা আকরিক, টিন, ফসফেটস, পেট্রোলিয়াম, মলিবডেনাম, লবণ এবং জিপসামসহ প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ। ইউরেনিয়াম উৎপাদন এবং সরবরাহে নাইজার বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একটি দেশ , যা পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পদ এতদিন লুট করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স। তার বিনিময়ে নাইজার ও তার জনগণের কোন উন্নতি হয়নি। তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও নেই। গত মাসে নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করেন প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান আবদোরাহমানে তিয়ানি। ক্ষমতাচ্যুত বাজুম যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের প্রতি নতজানু ছিলেন এবং তাদের সাথে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পার্টনারশিপ তৈরি করেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের সেনা ঘাঁটি রয়েছে নাইজারে। তবে এতে সেনাবাহিনীর মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। ফ্রান্সের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার ব্যাপারেও সেনারা অখুশি ছিল। ক্ষমতাচ্যুত বাজুম সেনাবাহিনীর প্রভাব কমানোর জন্য পদক্ষেপ হিসাবে কিছু সেনা কর্মকর্তাকে অবসর নিতে বাধ্য, বেশ কয়েকজনকে বিদেশে পাঠানো এবং প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডদের সুযোগ-সুবিধা কাটছাঁট করেছিলেন। অন্যদিকে জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হয় জীবনযাপনের খরচ ও নানা সঙ্কটে বাজুম সরকারের ভূমিকা নিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স সবসময় নাইজারকে ওই অঞ্চলের ইসলামিক উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে একটি পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করে। নাইজারের রাজধানী নাইমেতে সেনা অভ্যুত্থানের সমর্থনে জনগণ মিছিল বের করেছে, সেখানে রাশিয়ার পতাকা হাতে তুলে নেওয়া হয় এবং ফরাসী বাহিনীকে তাড়ানোর উল্লাস করা হয়। আফ্রিকান দেশগুলি পশ্চিমা সহায়তার পরিবর্তে নিরাপত্তার জন্য রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপকে ব্যবহার করছে। নাইজারে নতুন সরকার রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গঠনে আগ্রহী, যারা নাইজারের নিরাপত্তার জন্য একটি সরল এবং নতুন 'গ্যারান্টার' হয়ে উঠবে। চীন আফ্রিকান দেশগুলিকে অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত সহায়তা, আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপহীন এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন প্রদান করে থাকে। আমেরিকা ও ফ্রান্স বিনা লড়াইয়ে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ নাইজারকে ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক নয়। বর্তমানে নাইজারে মার্কিন, ফ্রান্স ও পশ্চিমাদের সঙ্গে একটি নতুন সংঘর্ষের মঞ্চ তৈরি হয়েছে।
রাশিয়া ও চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেক ভাল। বিশ্ব রাজনীতির পেক্ষাপটে, আমেরিকা ও তার মিত্রদের নীতি হলো মার্কিন স্বার্থ বিরোধি হলে সরকার পতনে ভূমিকা রাখা ও গণতান্ত্রিক সরকারকে চাপে রাখা বা রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে বিদায় করা, আভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করা সর্বপরি "বিদেশী শক্তির (যুক্তরাষ্ট্রর) বুট পালিশ “ রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসাধারণকে "ভাল" এবং "মন্দ" এর মধ্যে বেছে নিতে হবে এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও মার্কিন, ইউরোপ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘আদেশের’ বিরোধিতা করা। পৃথিবী বদলে গেছে। 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'র প্রেক্ষাপট শেষ হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের বিপরিতে চীন এবং রাশিয়ার উত্থান হয়েছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের নব্য ঔপনিবেশিক মানসিকতায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে ‘বুট পালিশ’ রাজনৈতিক দল সরকারে আনার আমেরিকা ও তার মিত্রদের নীতির বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর হওয়া উচিত বাংলাদেশের জনগণের।
Негізгі бет পর্ব -১৫১। আমেরিকার ঔপনিবেশিক মানসিকতা এবং বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা।
Пікірлер: 1