ফ্যাটি লিভার নিয়ে মেডিটকে বলেছেন
ডা. ওয়াদুদ আলী খান
মেডিসিন, গ্যাস্ট্রিক-লিভার রোগ চিকিৎসক
এন্ডোস্কপিস্ট ও ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান
চেম্বারঃ
ডা. আজমল হাসপাতাল
মিরপুর, ঢাকা
01716-857717
পেটের অতিরিক্ত চর্বি সমস্যায় ভোগেন অনেকে। যাকে বলে ফ্যাটি লিভার। এই ফ্যাটি লিভারের কারণে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে। তাই পেটের অতিরিক্ত চর্বি থাকলে তা অবশ্যই কমিয়ে ফেলতে হবে।
ADVERTISEMENT
ভুঁড়ি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিভারেও চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ে। আর কাজ করার ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। আবার অনেক সময় কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তবে এই ফ্যাটি লিভারের জন্য অনেকে নানাবিধ ওষুধ সেবন করে থাকেন। তবে বিশেষ ওষুধ খাওয়ার আগে লিভার এনজাইম পরীক্ষা করে নিতে হবে।
ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শঙ্কর সেনগুপ্ত।
যেভাবে বুঝবেন ফ্যাটি লিভার হচ্ছে-
১. অনেক সময় অজান্তেই লিভারের কাজ করার ক্ষমতা কিছুটা ব্যাহত হয়। কখনও কখনও বিলিরুবিন বেড়ে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিলিরুবিন বেড়ে গেলে অথবা বছরে একবার নিয়ম করে চেকআপ করার সময় লিভার এনজাইম দেখে নিলে ভালো হয়।
২. ফ্যাটি লিভারের সব থেকে বড় লক্ষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোমরের মাপ বা মোদ্দা কথা ভুঁড়ি।
৩. লিভারে চর্বি জমলে স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যহত হয়। খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়, খাবারে অরুচি হয়, দ্রুত ওজন কমা, বমি বমি ভাব, বমিও হওয়া, খুব দুর্বল লাগা ও কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না।
৪. ফ্যাটি লিভার হলে মাথাব্যথা, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন, আচমকা কাঁপুনিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
৫. নখ বা চোখ হলদেটে লাগলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
৬. হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি সমস্যা হতে পারে।
৭. অপরিমিত মদ্যপান করলে লিভারের অসুখের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া টিবির ওষুধ, হরমোন ওষুধ, কিছু ব্যথার ওষুধসহ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকে লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
কী করবেন
উপরের সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ফ্যাটি লিভার বর্তমানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি নীরবে-নিভৃতে লিভারকে অকেজো করে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। আগে শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার বেশি দেখা গেলেও এখন গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
ADVERTISEMENT
এ ব্যাপারে শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, শরীরের পাওয়ার হাউজ হলো লিভার। আমরা যা খাই, লিভার সেটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে। অনেক সময় খাবারের সাথে কিছু রোগ-জীবাণুও পেটে চলে যায়। লিভার এ জীবাণুগলো ধ্বংস করে। আর এগুলো ধ্বংসের মাধ্যমেই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় ও শরীর সুস্থ থাকে।
ফ্যাটি লিভার কী
ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, আমাদের লিভারে সাধারণত ৩-৪ পাউন্ড চর্বি থাকে। লিভার সেলের চারপাশেও কিছু চর্বি থাকে। এ চর্বির পরিমাণ কোনোভাবে বেশি হলে অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভার সমস্যায় আক্রান্ত। এক সময় এটি ধনীদের রোগ মনে করা হত। কিন্তু এখন গ্রাম পর্যায়েও প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত। শহরে এ হার আরও বেশি হতে পারে। এটি অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। এজন্য চিকিৎসার চেয়ে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা বেশি জরুরি। এজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
ফ্যাটি লিভার কেন হয়
ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, পশ্চিমা সমাজে চর্বি তৈরির প্রধান কারণ অ্যালকোহল। এটি ছাড়াও অনেক কারণে চর্বি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও ফ্যাটি লিভার অনেক বেশি হয়। এর বাইরে বিভিন্ন ওষুধ সেবন অথবা অন্যান্য রোগের কারণে ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে। স্বাভাবিক ওজন কিংবা কম ওজনের মানুষেরও হতে পারে, সেটিকে লিন ফ্যাটি লিভার বলা হয়। লিভারের চর্বি জমার ক্ষেত্রে ধরাবাঁধা কোনো বয়স নেই। বাচ্চাদের মধ্যেও এখন এই রোগের হার প্রায় ১৫ শতাংশ। এজন্য বাচ্চাদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যেসব বাচ্চার ওজন বেশি।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, ফ্যাটি লিভার অনেকটা নীরব ঘাতক। স্বাভাবিক বা ফ্যাটের সময় কোনো মানুষই সেভাবে বুঝতে পারেন না। আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে গিয়ে ধরা পড়ে। শুরুর দিকে লিভারের চারপাশে কিছু চর্বি জমা হয়, অন্য কোনো লক্ষণ থাকে না। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে প্রদাহ শুরু হয়। এ সময় লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুরুতে শরীরে শক্তি কমে যায় এবং দুর্বল অনুভব করে। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। এর বাইরে জন্ডিস হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশ, চোখ, মুখ, হাত হলুদ হতে পারে।
তিনি বলেন, এ অবস্থা আরও বেশিদিন চললে হাত-পায়ে পানি জমা হতে পারে। অনেক সময় রক্ত বমিও হয়। এরপরও চিকিৎসা না করালে সেটি লিভার ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। ক্যানসার হলে লিভারে চাকা হয়। লিভার বড় হয়ে যায় এবং রোগীরা ক্ষীণ বা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় রোগীর আয়ু দ্রুত কমে যায়।
Негізгі бет ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ | ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তির উপায় | Fatty Liver Medicine
Пікірлер: 5