পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় ( How to Increase Water Holding Capacity of Pond ) :
মাছ চাষ হল এক ধরনের আর্ট । কমার্শিয়াল বা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে সফল হতে চাইলে ,আমাদের মাছ চাষের সকল বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে । মাছ চাষে জলের ভূমিকা অতুলনীয়। মাছের স্বাস্থ্য ,তাদের বৃদ্ধি ,বংশবিস্তার, রোগ -পোকার নিয়ন্ত্রণ ,মাছের স্বাদ ও গন্ধ এবং সর্বোপরি মাছের উৎপাদন ,সবকিছুই পুকুরের জলের ওপর যথেষ্টভাবে নির্ভরশীল ।
জলের গভীরতার সাথে মাছের উৎপাদন সরাসরিভাবে সম্পর্কযুক্ত। পুকুরের জলের গভীরতা কম থাকলে গরমের সময় জল তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় ।ঠিক তেমনি ভাবে শীতের সময় জল ঠান্ডা হয় তাড়াতাড়ি। যা মাছের মধ্যে অস্বস্তি এবং চাপ সৃষ্টি করে ।জলের গভীরতা কম হলে পুকুরের আয়তন কমে যায় ।জলের মোট পরিমাণ কমে যায় ।মাছেদের বাসস্থানের মোট জায়গাও কমে যায় ।মাছের খাবার দাবার সংগ্রহ করা এবং চলাফেরায় যথেষ্ট অসুবিধা হয় ।তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় ।ফলে মাছের উৎপাদনও কমে যায়। মাছ জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকে ।তাই জলের গভীরতা যদি সঠিক পরিমাণে রাখা না যায় ,তবে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকবে ।যার দরুন মাছের হজমে অসুবিধা হবে। ফলে কাঙ্খিত মাছের উৎপাদন কখনোই হবে না।
বেশিরভাগ মাছচাষিদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে ,পুকুরে সারা বছর জল থাকে না থাকলেও দুই থেকে তিন ফিটের বেশি থাকেনা ।পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় মাছের উৎপাদন এবং উৎপাদন এর মেয়াদ 6 মাস থেকে 8 মাসের মধ্যে হয় এবং তারপর পুকুর শুকিয়ে যায়। ফলে ইচ্ছা থাকলেও কোনো পথ তারা খুঁজে পান না ।আবার অনেক চাষীর মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, পুকুর যদি খুব গভীরভাবে খনন করা যায় ,তবে জল ধরে রাখা সম্ভব ।কিন্তু এটাও একটা ভুল পদক্ষেপ ।কেননা পুকুর গভীর করার ফলে জলের গভীরতা অনেক বেশি হয়ে যায়। যা সমানভাবে মাছের উৎপাদনকে ব্যাহত করে ।আবার অনেক পুকুরে বর্ষা কালীন সময়ে 10 থেকে 15 ফুট পর্যন্ত জল থাকে । কিন্তু দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ওই পুকুরের জল দুই থেকে তিন ফুটে নেমে আসে ।ফলে ইচ্ছা না থাকলেও মাছ বিক্রি করে দিতে হয়।
পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে না পারলে কম গভীরতায় কম অক্সিজেন দ্রবীভূত থাকবে। তাতে মাছের শ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট সহ খাদ্য হজমে অসুবিধা হবে। অন্যদিকে নিয়মিত জল সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ বা তেল খরচ সহ জল বেরিয়ে যাওয়ায় পুকুরের জলে থাকা পুষ্টিগুণও বেরিয়ে যাবে। দুই মিলিয়ে চাষীকে সব দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। পুকুরের জল তিন দিক দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে -
1) পুকুরের তল দিয়ে
2) পুকুরের পাড় দিয়ে
3) সূর্যের আলোতে জল বাষ্পীভূত হয়ে ।
এ ক্ষেত্রে সূর্যের আলোতে বাষ্পীভূত হয়ে জল খুব কম সংখ্যায় বেরিয়ে যায় ।প্রধানত পুকুরের জল এবং পাড় দিয়ে জল বেরিয়ে যায় ।কোন মাটির সাথে জৈব পদার্থ যদি কমপক্ষে শতকরা 5 ভাগ না থাকে তবে সেই মাটিতে জল ধারণ ক্ষমতা থাকে না ।অতএব পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ জৈব পদার্থ ব্যবহার করা দরকার ।জৈব পদার্থ হিসেবে গোবর ,কম্পোস্ট, খড় কিংবা পাতা পচা সার হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ।জৈব পদার্থ যখন মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নেওয়া যায়, তখন মাটির জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অথবা পুকুরের জল যাতে শুকিয়ে না যায় ,তার জন্য আমরা কি কি করতে পারি -
1) পুকুরের তলা খুব ভালো করে চাষ করে নিতে হবে । সেটা হাল দিয়ে হোক বা ট্রাক্টর দিয়ে কিংবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে । এক কথায় যাতে কাদা তৈরি হয় ।
2) শতকে 2 থেকে 3 কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে । চুন মাটির কনাগুলিকে ভেঙে চিকোন করে দেবে ।ফলে সরু সরু ছিদ্র গুলি বন্ধ হয়ে যাবে।
3)পুকুরের মাটিতে যদি বালি বা পাথরের ভাগ বেশি থাকে, তবে শতকে 20 থেকে 25 কেজি জৈব পদার্থ পুকুরের তলায় এবং পুকুরের পাড়ে ভালো করে ছিটিয়ে দিতে হবে ।যদি পুকুরের মাটি দোআঁশ বা এটেল হয় তবে জৈব পদার্থ শতকে 10 থেকে 12 কেজি হারে ছিটিয়ে দিতে হবে ।এই জৈব পদার্থ পুকুরের তল এবং পার্শ্ব চোয়ানো বন্ধ করে দেবে ।
4) শতকে 3 থেকে 4 কেজি হারে ছাই পুকুরের তলায় এবং পাড়ের দিকে ছিটিয়ে দিতে হবে । যদি পুকুরের মাটিতে বেলে বা পাথরের ভাগ বেশি থাকে ,তবে শতকে 6 থেকে 8 কেজি পর্যন্ত ছাই ব্যবহার করা যেতে পারে ।
5) শতকে 1থেকে 2 কেজি হারে খড় পুকুরের তলায় বিছিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
6) বিঘা প্রতি 10 থেকে 15 কেজি সরিষার খোল 1থেকে 2 দিন ভিজিয়ে রেখে তারপর পুকুরে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিলে পুকুরের তলায় একটা আস্তরণ পড়বে । যা পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা কে অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে ।
প্রথমে 2 থেকে 3 ফিট জল দিতে হবে । তারপর 3 থেকে 4 দিন পর আবার জলের লেভেল বা গভীরতা বাড়িয়ে দিতে হবে ।এইভাবে পুকুর প্রস্তুত করে নিতে পারলে ,আশা করা যায় যে ,পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে। সবশেষে একটা কথাই বলবো পুকুরের চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ভাবে জৈব পদার্থ,চুন,ছাই,খড় এবং সরিষার খোল দিলে ,পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই ।
-----------------------------
Joyride by tubebackr & Sarah Jansen
/ tubebackr
/ sarahjansenmusic
Creative Commons - Attribution 3.0 Unported - CC BY 3.0
Free Download / Stream: bit.ly/3p6ATNa
Music promoted by Audio Library • Joyride - tubebackr & ...
-----------------------------
Негізгі бет পুকুরের জল ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপায় ( How to Increase Water Holding Capacity of Pond )
Пікірлер: 33