Q&A 03: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা আমেরিকায় পড়তে আসা সম্ভব?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট হয়ে আমেরিকা থেকে ফান্ড পাওয়া সম্ভব কিনা!
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন অনেক তরুণ-তরুণী। আজ পড়ুন এমনই একজন- অমৃত লাল রায় এর গল্প। বর্তমানে তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ লুইজিয়ানা এট লাফিয়েতে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করছেন। এর আগে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন অমৃত লাল রায়?
আমেরিকায় আবেদন করা অন্যান্য দেশের তুলনায় আমার কাছে কিছুটা বেশি সিস্টেমেটিক মনে হয়েছে। জাতীয় পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট এবং সকল সার্টিফিকেটে নিজের তথ্য সব এক না থাকলে প্রথমে সেগুলোকে এক করে নিতে হবে। আমার যেমন জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নাম একটু অন্যরকম ছিল, তাই আমি পাসপোর্ট করবার পূর্বেই সেটা সংশোধন করে নিয়েছিলাম। এরপরে আসে অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টস তোলার প্রসেস শুরু করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কাজগুলো এখন খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে করে ফেলা যায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাগজ ওঠানোর কথা শুনলেই আমাদের মনের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করে, কিন্তু আমার কাছে বরং মনেহয়ছে পুরো জার্নির সবচে কম স্ট্রেস-ফ্রি ধাপ ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সকল কাগজ তোলা এবং সেগুলোর সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করা। কাগজ পত্র রেডি হয়েগেলে এরপরে নজর দেয়া উচিৎ স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) এর দিকে, কারণ আমার মত যাদের সিজিপিএ কম, আমার স্নাতক এবং স্নাতোকোত্তর দুটোতেই ৩.০৬ ছিল, তাদের জন্য এই ১০০০ শব্দ হল সবচে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিজেকে উচ্চতর শিক্ষার যোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করবার জন্য। SOP লেখার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন জিনিসগুলো আমাকে সাহায্য করবে, সেই বিষয়গুলোতে আমি কিভাবে নতুন কিছু সংযুক্ত করতে পারবো, এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার কাজ ও প্রচেষ্টার মেলবন্ধনে যে উন্নয়ন ঘটবে সেটা নিজের দেশে ফিরে এসে আবার কিভাবে কাজে লাগাতে পারবো - এই তিনটা বিষয়ের ওপরে আমি জোর দিয়েছিলাম। যাদের রাইটিং স্যাম্পল জমা দেয়ার রেকয়ারমেন্ট আছে তাদের জন্য ফান্ড ম্যানেজ করবার অন্যতম হাতিয়ার হল এটা, ১৫ থেকে ২০ পেজের স্কলারলি রাইটিং পড়ে এডমিশান কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের বিশ্লেষণ করবার সামর্থ্য কেমন এবং কতটা। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে যতটুকু বুঝেছি তাতে আমার ধারনা ইংরেজিতে ফান্ড পাবার সম্ভাবনার ৬০ থেকে ৭০ ভাগ নির্ভর করে রাইটিং স্যাম্পল এবং স্টেটমেন্ট অফ পারপাসের ওপরে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গ্রুপ রয়েছে National University Research and Higher Study Association নামে, যেখান থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইলে রাইটিং স্যাম্পল, রিসার্স এবং উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে পরামর্শ এবং গাইডলাইন্স পেতে পারেন।
দেশে থাকতে একটা কথা প্রায়শই শুনতাম, আমেরিকা ইজ দ্যা ল্যান্ড অফ অপারচুনিটিজ। এই কথার সত্যতা এখানে এলে প্রতিদিন বোঝা যায়, আমি এখানে আসার দু সপ্তাহের মাঝে একটা প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডির সুযোগ পাই, আমার পছন্দের ফিল্ড নিয়ে এখনো নিশ্চিত নই বলে ওখানে পিএইচডির বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবার রিসোর্স থেকে শুরু করে শিক্ষকদের গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টসদের কলিগ সম্বোধন করার মত বিষগুলো এত অনুপ্রেরণাদায়ক যে বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি পড়াশোনার চাপ থাকা স্বত্বেও এখানের পড়াশোনা খুব একটা অস্বস্তির মনে হয়না।পড়াশোনার সাথে আমি এখানে গ্রাজুয়েট টিচিং এসিট্যান্ট হিসেবে প্রথম সেমেস্টারে রাইটং ল্যাবে লাজ করছি, যেখানে আমি শিক্ষার্থীদের রাইটিং উন্নয়নে টিউটিওরিং করছি এবং পরবর্তী সেমেস্টার থেকে ইংরেজি মেজর আন্ডারগ্রাড স্টুডেন্টসদের ক্লাস নেয়া শুরু করবো। রাইটিং ল্যাবে আমাদের ডিরেক্টর সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনার সাথে সাথে আমাদের যাতে ল্যাবে বোরিং না লাগে সেজন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে নাস্তা থেকে শুরু করে ফিগেট স্পিনারের মত রিক্রিয়েশনাল টুলস এর ব্যবস্থা করে রেখেছেন। পাশাপাশি এখানে বাংলাদেশি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন এত দারুণ যে নতুন স্টুডেন্সদেরকে বাসা খোঁজা থেকে শুরু করে বাজার করে দেবার মত বিষয়গুলো তারা সামাল দিচ্ছেন। এখানে আসার পূর্বে বাংলাদেশে বসে এখানে এসে কোথায় উঠবো, কিভাবে সব ম্যানেজ করবো এগুলো নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের সবাই, স্পেশ্যালি প্রেসিডেন্ট আরমান রিয়াজ ভাই যেভাবে আমাদের জন্য সবকিছু ম্যানেজ করেছেন তাতে আমেরিকা যে আমাদের জন্য নতুন জায়গা সেটা মনে হচ্ছে না, এবং পরিবারের অভাবও তারা সেভাবে আমাদেরকে বোঝার সুযোগ দিচ্ছেন না প্রত্যেক উইকেন্ডে কিছু না কিছু আয়োজন করবার মধ্য দিয়ে।
শেষ করবো এই বলে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণ করা উচ্চতর শিক্ষার পথে আমারিকায় সেভাবে কোন বাধা নয়, উচ্চতর শিক্ষা নিয়ে কারো আগ্রহ ও স্বপ্ন থাকলে এবং সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য লেগে থাকলে আমেরিকায় যে কোন বিষয় নিয়েই ফুল ফান্ড পাওয়া সম্ভব। তাই স্বপ্ন যাদের আকাশ ছোঁয়ার তাদের হারাবার সামর্থ্য শুধু তাদের নিজেদের বাদের আর কারো নেই। খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষক থেকে শুরু করে আমার সহপাঠীরা সকলেই আমাকে আজকের এই যায়গায় পৌঁছানোর পেছনে কোন না কোনভাবে সাহায্য করেছেন, তাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। একই সাথে আমি সমানভাবে ঋণী ঢাকা সিটি কলেজের কাছে, ওখানে কাটানো এক বছর আমাকে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখবার সাহস জুগিয়েছে, প্রত্যেক শিক্ষক আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে জ্ঞানের সাগরে সাহস করে নেমে পড়তে হয়।
Негізгі бет Q&A 03: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা আমেরিকায় পড়তে আসা সম্ভব?
Пікірлер: 18