বেদে বা বাইদা যে নামেই ডাকা হোক না কেন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় বেদেরা অবহেলিত যাযাবর জনগোষ্টি। স্থায়ী বাসস্থানের অভাবে ঘুরে বেড়ায় এখানে সেখানে। কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে অতিবাহিত করে তাদের জীবন, তা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। বেদে সম্প্রাদায় নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গল্প উপন্যাস, নির্মাণ করা হয়েছে অনেক নাটক সিনেমা। কিন্তু এতো কিছুর পরও বেদে সম্প্রদায়ের জীবন মানের হয়নি কোন ইতিবাচক পরিবর্তন। প্রান্তিক এই বেদে সম্প্রদায়ের সুন্দরী বেদে কন্যাদের জীবনযাত্রা নিয়ে নির্মাণ করেছি এই ভিডিও। আজ এসেছি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঝিনাই নদী তীরবর্তী রশিদপুর গ্রামে। নদী তীরবর্তী এই জায়গায় অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলেছে কিছু বেদে সম্প্রদায়ের লোক। পলিথিন কাগজ দিয়ে মোড়ানো এই ছোট ছোট এই ঘরগুলোর সাথে মিশে আছে বেদে পরিবারের হাসি কান্না মিশ্রিত হাজারও স্তৃতি। খোলা আকাশের নিচে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে তাদের বেঁচে থাকতে হয় প্রতিটি দিন। বেদে পরিবারের ছেলেরা সাধারণত অলস প্রকৃতির হয়ে থাকে। তাই সংসারের উপার্জনের কাজটি মূলত বেদে মেয়েরাই করে থাকে। বেদে মেয়েরা স্বাধীনচেতা। তারা এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছুটে বেড়ায়। সারাদিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাবিজ কবজ বিক্রি,সিংগা লাগানো,দাতের পোকা ফেলা ও ঝাঁড়ফুঁকসহ বিভিন্ন হাতুড়ে চিকিৎসার মাধ্যমে যে উপার্জন করে সেই অর্থ দিয়েই চলে বেদেদের সংসার। প্রাচীনকাল থেকে বেদে ছেলেরা হাট-বাজারে ও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সাপ খেলা ও বানর খেলা দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করে। প্রতিটি বেদে পল্লীতে একজন করে বেদে সর্দার থাকে। বেদে পল্লীর সকলেই বেদে সর্দারকে সমীহ করে। বেদে পল্লীর ন্যায়-অন্যায়ের বিচারের দায়িত্বও বেদে সর্দারের। কথা বলেছি বেদে সর্দারের সাথে। বেদেরা দাবী করেন, বেদে শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে বেদুইন থেকে। তবে ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ১৬৩৮ সালে বেদেরা আরাকান রাজবল্লাল রাজার সঙ্গে প্রথম এ দেশে আগমন করে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। পরে বিক্রমপুরে প্রথম বসতি গড়ে তোলে এই বেদে সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। কিছুকাল সেখানে বসবাস করার পর বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বেদেদের মধ্যে কেউ জলে আবার কেউ স্থলে বাস করে। বেদেদের একটি বড় অংশ জলে বাস করলেও আবার কিছু অংশ স্থলে বাস করে। জলে বাস করা বেদেদের বলা হয় ভাসমান বেদে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, 'বাংলাদেশে প্রায় আট লাখ বেদে সম্প্রায়ের মানুষ রয়েছে'। বেদে জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯০ শতাংশই নিরক্ষর। যাযাবর জনগোষ্টী হওয়ার কারণে তাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। শুধু তাই নয় বেদে বহরগুলোতে বেদে সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে ওঠে। যথাযথ শিক্ষার অভাবে বংশ পরম্পরায় তারাও বাপ দাদার পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়। পরিশেষে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্পের মতো জ্ঞাতি খুড়ার চরিত্র নয়, বেদে বা বাইদ্যা হিসেবেও নয়, এরা ‘মানুষ’ হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি পেয়ে থাক এটাই আমাদের আশা - এটাই আমাদের প্রত্যাশা…
- Күн бұрын
সুন্দরী বেদে কন্যাদের কষ্টের জীবন || বেদে সম্প্রদায় || বেদের মেয়ে || The life of bade's girls
- Рет қаралды 6,046
Пікірлер