৪১-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:
হযরত কা'ব আহবার (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা একজন ফেরেশতাকে বায়তুল মুকাদ্দাসে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে একথা বলার নির্দেশ দিবেনঃ “সড়া-গলা অস্থিসমূহ এবং হে দেহের বিচ্ছিন্ন অংশসমূহ! আল্লাহ তোমাদেরকে একত্রিত হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। তোমাদের মধ্যে তিনি ফায়সালা করবেন।” সুতরাং এর দ্বারা সূর বা শিংগাকে বুঝানো হয়েছে। এই সত্য ঐ সন্দেহ ও মতভেদকে দূর করে দিবে যা ইতিপূর্বে ছিল। এটা হবে কবর হতে বের হয়ে যাওয়ার দিন।
মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রথমে সৃষ্টি করা, তারপর ফিরিয়ে আনা এবং সমস্ত মাখলুককে এক জায়গায় একত্রিত করার ক্ষমতা আমার রয়েছে। ঐ সময় প্রত্যেককে আমি তার আমলের প্রতিদান প্রদান করবে। প্রত্যেকে তার ভাল-মন্দের প্রতিফল পেয়ে যাবে। যমীন ফেটে যাবে। সবাই তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, যার ফলে মাখলুকের দেহ অংকুরিত হতে শুরু করবে, যেমন কাদায় পড়ে থাকা শস্য বৃষ্টি বর্ষণের ফলে অংকুরিত হয়। যখন দেহ পূর্ণরূপে গঠিত হয়ে যাবে তখন আল্লাহ তা'আলা হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার হুকুম করবেন। সমস্ত রূহ শিংগার ছিদ্রে থাকবে। হযরত ইসরাফীল (আঃ)-এর শিংগায় ফুৎকার দেয়ার সাথে সাথে রূহগুলো আসমান ও যমীনের মাঝে ফিরতে শুরু করবে। ঐ সময় মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলবেনঃ “আমার ইযযত ও মর্যাদার কসম! অবশ্যই প্রত্যেক রূহ নিজ নিজ দেহের মধ্যে চলে যাবে। যাকে সে দুনিয়ায় আবাদ করে রেখেছিল।” তখন প্রত্যেক রূহ নিজ নিজ দেহে চলে যাবে এবং যেভাবে বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া চতুষ্পদ জন্তুর শিরায় শিরায় অতি তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায় সেই ভাবে ঐ দেহের শিরা উপশিরায় অতিসত্বর রূহ চলে যাবে। আর সমস্ত মাখলুক আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী দৌড়তে দৌড়তে অতি তাড়াতাড়ি হাশরের মাঠে হাযির হয়ে যাবে। এই সময়টি হবে কাফিরদের উপর অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
یَوْمَ یَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِیْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَ تَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا
অর্থাৎ “যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাক দিবেন তখন তোমরা তাঁর প্রশংসাসহ তার আহ্বানে সাড়া দিবে এবং তোমরা ধারণা করবে যে, তোমরা খুব অল্পই বসবাস করেছো।” (১৭:৫২)।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বপ্রথম আমার কবরের যমীন ফেটে যাবে।”
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এই সমবেত সমাবেশকরণ আমার জন্যে সহজ। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَ مَاۤ اَمْرُنَاۤ اِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍۭ بِالْبَصَرِ
অর্থাৎ “আমার হুকুম একবার ছাড়া নয়, চক্ষু অবনত হওয়ার মত।” (৫৪:৫০) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ
مَا خَلْقُكُمْ وَ لَا بَعْثُكُمْ اِلَّا كَنَفْسٍ وَّاحِدَةٍ اِنَّ اللّٰهَ سَمِیْعٌۢ بَصِیْرٌ
অর্থাৎ “তোমাদের সকলকে সৃষ্টি করা এবং মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করা একটি প্রাণকে মেরে পুনর্জীবিত করার মতই (অতি সহজ), নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।” (৩১:২৮)।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘তারা যা বলে তা আমি জানি (এতে তুমি মন খারাপ করো না)। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
وَ لَقَدْ نَعْلَمُ اَنَّكَ یَضِیْقُ صَدْرُكَ بِمَا یَقُوْلُوْنَ ـ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَ كُنْ مِّنَ السّٰجِدِیْنَ ـ وَ اعْبُدْ رَبَّكَ حَتّٰى یَاْتِیَكَ الْیَقِیْنُ
অর্থাৎ “ (হে নবী সঃ)! অবশ্যই আমি জানি যে, তারা যা বলছে এতে তোমার মন সংকীর্ণ হচ্ছে। (কিন্তু তুমি সংকীর্ণমনা হয়ে না বা মন খারাপ করো না, বরং) তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং সিজদাকারীদের অর্থাৎ নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত হও। আর তোমার পতিপালকের ইবাদতে লেগে থাকো যে পর্যন্ত না তোমার মৃত্যু হয়। (১৫:৯৭-৯৯)
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও’ অর্থাৎ তুমি তাদেরকে জোরপূর্বক হিদায়াতের উপর আনতে পার না এবং এরূপ করতে আদিষ্টও নও। এও অর্থ হয়ঃ তুমি তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করো না। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই উত্তম। কেননা, শব্দে ‘তুমি তাদের উপর জোর-জবরদস্তি করো না এরূপ নেই। বরং আছে- তুমি তাদের উপর জাব্বার নও। অর্থাৎ “হে নবী! তুমি শুধু তাবলীগ করেই তোমার কর্তব্য সমাপ্ত কর। جَبَرَ শব্দটি اَجْبَرَ শব্দের অর্থেও এসে থাকে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে তুমি উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে। অর্থাৎ যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, তার শাস্তিকে যে ভয় করে এবং তাঁর রহমতের আশা করে, তাকে তুমি কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ দাও। এতে সে অবশ্যই উপকৃত হবে এবং সঠিক পথে চলে আসবে। যেমন আল্লাহ পাক অন্য আয়াতে বলেনঃ
فَاِنَّمَا عَلَیْكَ الْبَلٰغُ وَ عَلَیْنَا الْحِسَابُ
অর্থাৎ “তোমার দয়িত্ব শুধু পৌছিয়ে দেয়া এবং হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমার।” (১৩:৪০) আর এক জায়গায় আছেঃ
فَذَكِّرْ اِنَّمَاۤ اَنْتَ مُذَكِّرٌ ـ لَسْتَ عَلَیْهِمْ بِمُصَۜیْطِرٍ
অর্থাৎ “অতএব তুমি উপদেশ দাও, তুমি তো একজন উপদেশদাতা। তুমি তাদের কর্মনিয়ন্ত্রক নও।” (৮৮:২১-২২)।
অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ
لَیْسَ عَلَیْكَ هُدٰىهُمْ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ
অর্থাৎ “তাদেরকে হিদায়াত করা তোমার দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত দান করে থাকেন।” (২:২৭২) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ
اِنَّكَ لَا تَهْدِیْ مَنْ اَحْبَبْتَ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ یَهْدِیْ مَنْ یَّشَآءُ
অর্থাৎ “তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দান করতে পার না, বরং আল্লাহ যাকে চান হিদায়াত দান করে থাকেন।” (২৮:৫৬) এজন্যেই আল্লাহ তা'আলা এখানে বলেনঃ “তুমি তাদের উপর জবরদস্তিকারী নও, সুতরাং যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে তুমি উপদেশ দান কর কুরআনের সাহায্যে।
হযরত কাতাদা (রঃ) দু'আ করতেনঃ
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنَا مِمَّنْ يَّخَافُ وَعِيْدَكَ وَيَرْجُوْا مَوْعُوْدَكَ يَا بَارُّ يَا رَحِيْمُ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! যারা আপনার শাস্তিকে ভয় করে এবং আপনার নিয়ামতের আশা রাখে, আমাদেরকে আপনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করুন! হে অনুগ্রহশীল, হে করুণাময়!
#هيثم_الدخين
#alqaf141
Негізгі бет তোমরা তাকে কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করো || প্রতিটা আয়াত কলিজা কাঁপিয়ে দিবে💔 Heart teaching Voice 💖
Пікірлер: 4