ভাইরাল মেয়ে। কলমে: দোলনা বড়ুয়া তৃষা । পাঠে: শর্মিষ্ঠা প্রামানিক | Ichhepuron | ইচ্ছেপূরণ - কবিতা
প্রেমিকের আব্দারে নগ্ন ছবি দেওয়া মেয়েটা একদিন হঠাৎ টের পায় তার বিশ্বাসের সমস্ত প্রাচীর ভেঙে প্রেমিকের একটা আঙুলের ক্লিকে সারাবিশ্বের কাছে সস্তা হয়ে গেছে মেয়েটা ..... তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সে তার প্রেমিককে বিশ্বাস করেছিল !!
#ভাইরাল_মেয়ে
-তোর ছবি ভাইরাল হয়ে গেছে আর তুই কাঁথা মুড়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছিস হারামজাদী?
বুকের উপর মায়ের তীব্র লাথিতে কাঁথা মুড়ে দেওয়া অবস্থায় খাট থেকে পড়ে গেলাম। যে মা কখনো আমায় একটা থাপ্পড় দেয় নি। সে মা আমাকে এলোপাতাড়ি লাথি মেরে যাচ্ছে বুকে মুখে যে দিকে পারছে। আমি ভ্যাবাচেকা হয়ে গেলাম কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কোন মতে কাঁথাটা সড়িয়ে মা কে বললাম-
- হয়েছে টা কি? পাগল হয়েছে নাকি?
মা চুলের মুটি ধরে তুলে বলে - কি হয়েছে?
তোর খারাপ ছবি রাতারাতি নেটে ভাইরাল করছে ফকিন্নির ছেলেটা।
মা কি বলছে বুঝতে পারছি না। আমার আবার খারাপ ছবি কি? আর এই নামে তো মা মিশুকে ডাকে। মিশু কি করবে? ও কি ভাইরাল করবে? আমার ভালো ওর চেয়ে ভালো কেউ বুঝে নাকি? আমিই তো ওর পুরো দুনিয়া।
মা আমাকে আবার মারতে এলে ঠাম্মি আর কাকি মা এসে ধরে ফেলে। ঠাম্মি আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
- আরে করছো টা কি? এত বড় মেয়েকে এইভাবে মারে?
মা এইবার খাটে বসে পড়ে। মা কাঁদছে, খুব বিশ্রী ভাবে মুখটা ছড়িয়ে কাঁদছে। আমি মাকে কখনো কাঁদতে দেখি নি। এইভাবে তো কখনো না। মাকে দেখতে খুব খারাপ লাগছে৷ মা মাথায় চাপড় দিয়ে বলছে কান্না করে করে -
-এই দিন দেখার জন্য এত পড়ালেখা শিখিয়েছি? যখন যা চেয়েছে তা দিয়েছি, সবার সাথে যুদ্ধ করে ওর পাশে থেকেছি। নিজের ডিপিএস ভেঙ্গে ওর জন্য দামী ল্যাপটপ এনে দিয়েছি। এই দিন দেখার আগে আমি বিষ খেয়ে মরে গেলাম না কেন?
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে মাকে এইভাবে কান্না করতে দেখে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কি হয়েছে এখনো। আমার মোবাইল আমার কাছে নেই। কাল দাদা নিয়ে নিয়েছে।
আমি আর মিশু এক সাথে পড়ালেখা করেছি। ছয় বছরে রিলেশন আমাদের। বাসায় সবাই জানে।কিন্তু বিয়ের বেলায় কেউ মানছে না। একটার পর একটা ছেলেপক্ষের কাছে আমাকে দেখিই যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে দাদার অফিসের সিনিয়র স্যার কে দেখাল। ওরা পছন্দ করে ফেলল। বেশ সাদাসিধা ঢোলা শার্ট ট্রাউজার আর মাথার সামনের দিকে খানিকটা চুল চলে যাওয়া পারফেক্ট মধ্যবসয়ী লোক। সবাই প্রায় উঠে পড়ে লেগেছে বিয়েটা হয়ে যাক। কিন্তু আমি পরশু দিন ওনার সাথে দেখা করে বলে দিয়েছি আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি বিয়ে দিলে পালিয়ে যাবো। উনি দাদাকে বলল-
তোমার বোনের মত নিয়ে দেখানো উচিত ছিলো তোমার, ওর সাথে করতে হবে সংসার। ওর মতামতের দাম দেওয়া উচিত৷
দাদা সেদিন ভয়াবহ রেগে গিয়েছিলো। বাসায় এসে আমাকে অনেক কথা শুনায়, আমার মোবাইল নিয়ে নেয়, মিশুকে ফোন দেয়, এবং ওকে অনেক গালাগালি করে, আমি বারবার নিষেধ করছিলাম দাদাকে কিন্তু ও কথা শুনছিলো না। আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। আমিও সবাইকে বললাম-
- আমি মিশুকেই বিয়ে করব। তোমরা বিয়ে দিলেও পালিয়ে যাবো। মানসম্মান দেখব না৷
না খেয়েই শুয়ে পড়েছিলাম। সকালে মায়ের এইভাবে আমাকে মারধর। কিছুই বুঝতে পারছি না।
বাসায় সবার অবস্থা এই রকম। বাবা প্রেশার হাই হয়ে গেছে। দাদাকে দেখলাম কেমন বিধস্ত চেহেরা লাগছে। সবার নাম্বার একটার পর একটা কল এসেই যাচ্ছে। আমাকে এখনো কিছু টার্চ করছে না। আমি বুঝতে পারছি না কি এমন হয়েছে। মিশু যে কখনো এমন কিছু করবে না আমি শিওর। নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি আমি ওকে।আর তেমন কিছু তো নেই ওর কাছে। মাঝেমধ্যে ছবি দিলেও সে তো সাথে সাথেই ডিলেট করেছে বলেছে।
আমি ঠাম্মিকে দিয়ে দাদার কাছ থেকে মোবাইলটা আনালাম। মনে মনে খুশি লাগছে ওর হয়ত অনেক গুলো মেসেজ থাকবে। আমাকে এখন ওর রাগ ভাঙ্গাতে হবে। খাটে আরাম করে বসে মোবাইল অন করে ডাটা অন করলাম। আমি খাট নেমে উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম। ফেসবুকে আমার ছবি ভাসছে আমাকে যেন কেউ জোরে ধাক্কা দিলো, আমি দেওয়ালের সাথে লেগে বসে পড়লাম। খাট থেকে মোবাইলে স্কীনটা তখনো দেখা যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছি না কি এইসব? কে করল?
আমি কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলটা নিলাম, খুব বাজে ক্যাপশনে আমার ছবি, বুকের,মুখের। স্নান করার পর বুকের উপর টাওয়াল দেওয়া ছবি। হাজার হাজার লাইক কমেন্ট শেয়ারে ভাসছে পুরো টাইমলাইনে। কে ওরা? কারা এত শেয়ার করছে? ছবি গুলো তো আমি মিশুকে দিয়েছিলাম, ও কি নিজে করছে? নাকি ওর আইডি হ্যাক হয়েছে?
আমার বুক ধুকপুক করছে, হাত পা কাঁপছে, পায়ের হাটুতে হাটুতে বারি খাচ্ছে, পেটের ভিতর মোচর দিচ্ছে। বুকে কেউ পাথর দিয়েছে মনে হচ্ছে। গলা শুকিয়ে গেছে লবণ পানি বের হচ্ছে গালে। মাথাটা ফাঁকা লাগছে, এখন পড়ে যাবো মনে হচ্ছে।
আমি মিশুকে ফোন দিলাম, কয়েকবার রিং হওয়ার পর ধরল,
-হ্যালো, এই সব কে করেছে মিশু? তুমি কি খবর নিয়েছো?
- এতক্ষনে তাইলে ঘুম ভাঙ্গল তোর, আমি করেছি মা*।
আমি মোবাইল কান থেকে সরিয়ে আবার নাম্বার দেখলাম। না সেইভ নাম্বারেই তো ফোন দিয়েছি।
- মানে?
- মানে আবার কি, রাতারাতি ভাইরাল হয় গেলি আর কি।
- কি বলছ এইসব? আর তুই -তোকারী করছো কেন?
- কেন? কাল যখন তোর ভাই আমাকে তুই -তোকারী করছিল তখন তুই কোথায় ছিলি। খুব পয়সায় দেমাখ না তোদের? যা দিসি সব শেষ করে। দেখা এইবার দেমাখ।
আমি নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছি না। এত লেইম একটা এক্সকিউজে কেউ এমন একটা জগন্য কাজ করতে পারে? পরশু অবধি ভালোবাসি বলা ছেলেটা কিভাবে এক দিনে ভালোবাসার মানুষকে মাগী ডাকে? আমি তো উচ্চারণ ও করতে পারছি না শব্দটা। আমি আবার বললাম,
-তুমি কি পাগল হয়েছো? সব ডিলেট করো।
- হা হা, এখন কি আর এইসব আমার হাতে আছে?কত মানুষের কাছে ছড়িয়ে গেছে। ইনবক্সে ইনবক্সে খেলা হচ্ছে তোমায় নিয়ে। তোমার ভেজা চুলে টাওয়ালের ছবিটা কি ভাইরাল হলো মাইরি!
follow us on-
Instagram Link: / ichhepuron123
KZitem Link: / @ichhepuronsarmisthark...
Facebook Page: / ichhepuron123
Негізгі бет ভাইরাল মেয়ে। কলমে: দোলনা বড়ুয়া তৃষা । পাঠে: শর্মিষ্ঠা প্রামানিক | Ichhepuron | ইচ্ছেপূরণ - কবিতা
Пікірлер: 79