ডাইনি মা | কলমে: দোলনা বড়ুয়া তৃষা | পাঠে: শর্মিষ্ঠা প্রামানিক | Ichhepuron | ইচ্ছেপূরণ - কবিতা
আমি আমার বাচ্চাকে নিজের হাতে খুন করেছি। সবাই আমাকে ডাইনী মা ডাকে।
মেসেজটা দেখে আমি থেমে গেলাম। মাস খানিক আগে একটা ফিল্টার মেসেজ পেয়েছিলাম।
-তৃষা দি, তোমার লেখা আমি পড়ি, আমার জীবনের গল্পটা একটু লিখে দিবে?
আমি অনেক দিন পর দেখি মেসেজটা। আমি রিপ্লে করেছিলাম,
-আমি তো এখনো অত বড় লেখিকা হয় নি যে কারো জীবনের গল্প আমার লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারবো। আমি অনুভব না করলে লিখবো কিভাবে?
তারপর অনেক দিন সে কোন উত্তর দেয় নি। সাপ্তাহ খানিক আগে আবার রিপ্লে দিলো।
-তোমার না একটা মেয়ে আছে? ভীষণ আদুরে, খুব ভালোবাস তাই না মেয়েকে?
- হুম। অবশ্যই।
-তাহলে তুমি অনুভব করতে পারবে।
আমি আমার মেয়ে লাবন্যকে তখন নুডুস খাওয়াচ্ছি। ভীষণ দুষ্ট। সারাঘরে দৌড়ায়। ধরতে গেলে এক যুদ্ধ খাওয়াতে গেলে আরেক। কিল দুইটা না দিলে মুখেই খুলে না।
মেসেঞ্জারে টুং টুং শব্দ হচ্ছে অনেক গুলো। ভাবলাম মেয়েটা ছোট ছোট মেসেজ পাঠাচ্ছে।
কিছুক্ষন পর অন করলাম। একটা তিন বছরের মেয়ে ছবি। লাল পরীর ড্রেসে। ছোট বেলার ছবি। হামাগুড়ির ভিডিও। হাটার ভিডিও। মাম্মা মাম্মা বলা একটা ভিডিও আছে। সব মোট ৩৪ টা ছবি ভিডিও দিলো। সব দেখার কি টাইম আছে? স্কিপ করে মেসেজ দিচ্ছিলাম।
আদুরে মেয়ে তোমার। কিন্তু লাস্ট ছবি টা দেখে বুক কেঁপে উঠল আমার। মোবাইল পড়ে গেলো হাত থেকে।
সাদা কাফন পড়ানো চোখ বন্ধ , এমন ছবি যেকোন মায়ের কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
আমি অনেকক্ষন রিপ্লে করলাম না। সে বলল-
-দেখেছো দিদি, কি আদুরে মেয়ে না আমার?
-হুম, কিন্তু, মারা গেছে-?
আমি আর কোন শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তখন সে রিপ্লে করল।
-আমি আমার বাচ্চাটাকে নিজের হাতে খুন করেছি। সবাই আমাকে ডাইনী মা ডাকে।
আমি বুঝতে পারছিলাম না সে কি বলছে। এত আদর করছে দেখালো ভিডিও৷ এত আদরের বাচ্চাকে, তাও নিজের হাতে?
আমি রিপ্লে দিলাম,
-মানে?
তখন সে ছোট ছোট মেসেজে বলতে লাগলো এলোমেলো ভাবে। আমি সাজিয়ে নিয়েছি।
- আমি ছিলাম ভীষণ রাগী মেয়ে। মা বাবার ভীষণ আদুরে ছিলাম। আমার স্বামী আতিক(ছদ্মনাম)। সে ভুলিয়ে আমায় ঠান্ডা রাখত। বিয়ের পর প্রথমে বেবি নিলাম না। পড়া লেখা শেষে চার বছর পর বেবি নিলাম। আসলে বিয়ের পর একটা বেবি থাকাটা খুব ফিল হয়। সবার কথা তো ছিলো। মাঝেমধ্যে নিজে কান্না করতাম। কখন হবে আমার সোনার একটা পুতুল? আমি তাকে ইচ্ছেমতো সাজাবো৷
খোদা আমার কথা শুনেছিল৷ আমাকে একটা পুতুল দেওয়া হলো। মারিয়া। ভীষণ সুন্দর আমার মেয়েটা। কিন্তু আমার বেবি ছিলো কলিক বেবী। সারারাত কান্না করত। তাকে নিয়ে হাটতে হতো সারারাত। সকালের দিকে একটু ঘুমাতাম। শশুড়বাড়ি থাকতাম তারা যত ভালো হোক দশটা অবধি ঘুমানো তো পসিবল না। আমি পাঁচ টার দিকে ঘুমাতাম আট টায় উঠে যেতাম। আমি উঠার আগেই প্রায় আতিক অফিস চলে যেতো ওর অফিস ছিলো দূরে। সারারাতের ক্লান্তি, দিনের বেলা কাজ কর্ম,বাচ্চার কান্না, ময়লা কাথা, খেতে বসলে খেতে না পারা আধা পেটে দুধ খাওয়াতে গিয়ে আর খাওয়াই হতো না৷ যত বড় হচ্ছিল তত চিন্তা আজ এইটা তো কাল এইটা। তার স্বাস্থ্য বাড়ে না। তারপর এলো খাবারের যুদ্ধ।
এইসব কিছুর মধ্যে একসময় খেয়াল করলাম আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। আতিকের সাথে পাশাপাশি বসা হয় নি অনেক দিন। প্রিয় শাড়িটা ভাজ নষ্ট হয় নি বহুকাল। ধুলো জমছিলো গয়না গুলোতে, পেটে মেদ জমে ভারী করছিলো শরীর, চোখের নিচের কালি গুলো যেন অযত্নের সাক্ষী, মাথা লাগানো হয় না চিরুনি প্রতিদিন। কবিতা পড়ার শখ ছিলো ভীষণ। সবেতে পড়ছিলো ধুলো। আমি কাউকে কিছু বলতে পারতাম সবাই বলত এইটা স্বাভাবিক সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আর পারছিলাম না। নিজেকে ভীষণ হীন করে ফেলেছি মনে হচ্ছিল। স্বামীকে যেন পর লাগে। মা বাবার যেকোন কথায় যেন আমাকেই বলা হতো মনে হতো।
মারিয়া ততদিনে ভীষণ দুষ্ট। টিভি মোবাইল না দেখালে ভাত খেতে না। নিয়ম করে দুধ ডিম কলা ভাত সব খাওয়াত কিছুতে শরীর ফিরতো না। খাবার নিলে ঘন্টার পর ঘন্টা দৌড়াতে হতো। এতে আমার মেজাজ আরো খিটখিটে হতে যেতো। অল্প কিছুতেই মারধর করতাম বাচ্চাকে। কেউ কিছু বললে বাচ্চা মেরে রাগ দেখাতাম এতে ওরা আর বলত না। আমার মনে হতো উচিত হয়ছে। কিন্তু এতে করে ভয় জমছিলো মারিয়ার মনে। এত মারতাম তাও আমার বুকে এসেই কাঁদতো। সারাক্ষন পিছনে ঘুরতো। কোন কাজ করতে পারতাম না। নিজের জন্য কোন টাইম ছিলো না। সব কিছুর পর ও মেয়ের হাসিতে সব ভুলে যেতাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে মনে একটা আত্মগ্লানি রয়েই যেতো। পরোক্ষ ভাবে তা মারিয়ার উপর ফেলতাম।
Follow us on-
Instagram Link⬇️
/ ichhepuron123
KZitem Link⬇️
/ @ichhepuronsarmisthark...
Facebook Page⬇️
/ ichhepuron123
For promotions and other information or business-related inquiry mail me at
meghsarmistha712@gmail.com
Негізгі бет ডাইনি মা | কলমে: দোলনা বড়ুয়া তৃষা | পাঠে: শর্মিষ্ঠা প্রামানিক | Ichhepuron | ইচ্ছেপূরণ - কবিতা
Пікірлер: 63