কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান। স্কুল স্তরের ভূগোল বই থেকে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকা, এটি ভারতের এক শৃঙ্গ গন্ডারের অভয়ারণ্য। 1904 সালে লেডি কার্জনের উদ্যোগে এক শৃঙ্গ গন্ডারের এই চারণভূমি সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পরিণত হয়। অসমের গোলাঘাট ও নগাঁও জেলার প্রায় 232 বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই বনাঞ্চল শুধু এক শৃঙ্গ গন্ডারের আবাসস্থল নয়, ভারতের সর্ববৃহত জীব বৈচিত্র সমৃদ্ধ বনভূমিগুলির অন্যতম।
কোহরা বা সেন্ট্রাল, বাগোরি বা ওয়েস্টার্ন, আগরতলি বা ইস্টার্ন, বুড়াপাহাড় ও পানবাড়ি এই পাঁচটি রেঞ্জ-এ বিস্তৃত জঙ্গলে জীব বৈচিত্রের পাশাপাশি চোখে পড়ে অরণ্যের বৈচিত্রও। কোথাও ঘন বৃক্ষরাশি তো কোথাও বিস্তৃত তৃণভূমি। তবে প্রকৃতিগতভাবে এই অরণ্য চিরহরিত।
প্রধাণত ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় লালিত হলেও অসংখ্য নদী-হ্রদে পরিবেষ্টিত এই বনাঞ্চল। অসংখ্য জলবাহের পলিতে যেমন উর্বর এই বনভূমি তেমনই প্রতি বছর বন্যার জলে বিপন্ন হয় বহু বন্যপ্রাণ। কাজিরাঙার ভূমির প্রকৃতিও বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। কোথাও কোথাও উঁচু তো কোথাও নীচু। এই অসম ভূমির ঢাল বন্যার হাত থেকে বন্যপ্রাণীদের বাঁচতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
জিপসি ও হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল সাফারির সুযোগ রয়েছে। এমনকী আগরতলি রেঞ্জের ধনবাড়ি ঘাট থেকে জলপথে সাফারিও করতে পারেন।
কাজিরাঙায় পর্যটক ও গাইডদের প্রধান টার্গেটই থাকে বিগ-৫। যার অর্থ- হাতি, বারো শিঙ্গা হরিণ, গণ্ডার, এশিয়াটিক ওয়াটার বাফেলো ও রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। কাজিরাঙায় মূলত এক শৃঙ্গ গন্ডার দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় জমালেও বাঘের ঘনত্বে এই জঙ্গল প্রথম সারিতে রয়েছে। সংখ্যাতত্ত্ব বলছে, প্রতি ৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় একটি করে বাঘ রয়েছে। যদিও এখানকার চিরহরিত উদ্ভিদ, বিশালাকার এলিফ্যান্ট গ্রাস, জঙ্গলের ভিতর জল ও খাবারের পর্যাপ্ত জোগান ও সর্বোপরি বাঘের লাজুক স্বভাবের জন্য এখানে বাঘদর্শনের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে শুধু বাঘ নয়, ভাগ্য প্রসন্ন হলে আপনি গোল্ডেন টাইগারের দেখাও পেতে পারেন। ভারতে এমনকী পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র এই বনাঞ্চলেই রয়েছে দুটি গোল্ডেন টাইগার।
গোল্ডেন টাইগারের মতোই কাজিরাঙার অন্যতম আকর্ষণ হল হুলক গিবন। ভারতের মধ্যে অসম ও অরুণাচল প্রদেশের কয়েকটি জঙ্গলে দেখা মেলে এই বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের। বুড়াপাহাড় রেঞ্জের উঁচু গাছের ডালে সপরিবারে দেখা মিলতে পারে লেজবিহীন ও ভুরুযুক্ত এই বানর প্রজাতির।
বিগ-৫ ছাড়াও স্তন্যপায়ী প্রাণীর বিপুল সম্ভারের মধ্যে রয়েছে সম্বর হরিণ, চিতাবাঘ, ভাল্লুক, বুনো শুয়োর, হগ ডিয়ার, বার্কিং ডিয়ার, শিয়াল, ভাম বিড়াল। এছাড়াও রয়েছে হগ ব্যাজার, ইয়োলো থ্রোটেট মারটিন, ইন্ডিয়ান গ্রে মঙ্গুস, ব্ল্যাক ক্যাপড লেঙ্গুর, প্যাঙ্গোলিন, জায়েন্ট স্কুইরাল প্রভৃতি।
শুধু বন্য পশু নয়, কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ককে বলা যায় পাখির নন্দনকানন। স্থানীয় পাখিদের সঙ্গে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আনাগোনা এখানে লেগেই রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কচ্ছপ, গোসাপ, সাপ, প্রজাপতি, পোকা-মাকড় নিয়ে এক বিরাট জীব বৌচিত্রের নাম কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত ও বসন্ত এই চার ঋতুতে জঙ্গল ভিন্ন সাজে সেজে ওঠে। বসন্তে শিমুলের আগুন রঙে রাঙা হয়ে ওঠে কাজিরাঙা। আবার গ্রীষ্মের দাবদাহে দাবানলের হাত থেকে বন ও বন্যপ্রাণকে রক্ষা করতে বন দফতরকে কন্ট্রোল ফায়ারিং করতে হয়। অন্যদিকে প্রতি বছরই বর্ষায় ব্রহ্মপুত্রের জলে জঙ্গলের নীচু অংশ ডুবে যায়। বন্যায় বহু প্রাণীর মৃত্যু হয়। প্রাণ বাঁচাতে প্রাণীরা জঙ্গলে উঁচু অংশ এমনকী জাতীয় সড়কের উপরও আশ্রয় নেয়। এক দিকে বন্যা, অন্যদিকে জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করা দ্রুতগামী যান ও সেই সঙ্গে চোরা শিকারির হাত থেকে বন্যপ্রাণকে বাঁচাতে প্রশাসন দু’দশক ধরে লাগাতার কাজ করে চলেছে।
#assamtourism #kaziranganationalpark #wildlifephotography #rhino
Негізгі бет কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যান | Kaziranga National Park | Wildlife at kaziranga | Wildlife Photography
Пікірлер: 16